30 Oct 2014

কাঁপন, সময়, সত্য ও সুন্দর, ভাবনা, রামধনুর ছড়া, নিনাদ

কাঁপন
******
আকাশ কাঁপছে
কাঁপে   ধরাতল
বাতাস কাঁপছে
কাঁপে নদীর জল।

সমাজ কাঁপছে
কাঁপে মানুষের  মন 
শোষক কাঁপছে
কাঁপে  সিংহাসন।
*************

সময়
*****
উত্সবমুখর  দিনগুলিতে
অমাবস্যার আকাশেও 
 আনন্দের সুর বাজে।

সময় যখন বিপর্যস্ত
পূর্নিমার চাঁদও
 ম্লান হাসে।

সুসময়ের আলো
ঘন মেঘের আস্তরণ ভেঙে
ঠিকরে পরে।

সময় যখন বিষাদময়
শীতের নরম রোদ
গ্রীষ্য়ের দাবদাহ সৃষ্টি করে।
******************



 সত্য ও সুন্দর
 **********
 যা সত্য তাই সুন্দর
 সুন্দর যা তাই সত্য,
সত্য আর সুন্দরের মিলন
তারই মাঝে সার্থক জনম।


এই মহামিলনের কামনায়  মানুষ লড়ে
প্রাণকে বিলিয়ে দেয় তারই অন্বেষণে,
তারই অভাবে মানুষ মনুষ্যত্ব  হারায়
আমরা আজও আছি কিসের প্রতীক্ষায়!
*****************************


ভাবনা
******

নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের সারি
অলস কল্পনা,
মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাবার
দেয় উস্কানি।

তারই  মাঝে জীবনের গান
শক্ত মাটিতে পা রাখার
কঠিন আহবান।

খোলা আকাশে মুক্ত মেঘমালা
অন্ধকারে আশার প্রদীপ জ্বালা। 
কঠিন কঠোর জীবন
বয়ে আনে প্রানের স্পন্দন।

অবিরাম জীবনকে জানা
তারই গর্ভে জন্ম নেয়
হাজার ভাবনা
ভাবনা - নতুন ভাবনা
***************


(ছোটোদের জন্য )
---------------------
রামধনুর ছড়া
**********
ধনুকের আকারে
সাতরঙ্গা বাহারে
মেঘের ফলকে
বলো তো  আমি কে !

জলভরা আকাশে
পাখা মেলে বাতাসে
রৌদ্রের  চমকে
বলো তো আমি কে !

সময়ের গমকে
চোখের পলকে 
বসে আছি থমকে
বলো তো আমি কে !

বরিষণ শেষে
কুমারীর বেশে
সাতরঙ্গা ঝলকে
বলো তো   আমি কে !

লাল , বেগুনি,  সবুজে
নীল্ , কমলা , হলুদে,
মিলে মিশে সাদাতে
বলো তো আমি কে !

দেখি শুধু চোখ চেয়ে
বিদায়ের গান গেয়ে
তারপর দিনশেষে
মহাশূন্যে যাই ভেসে।
***************



নিনাদ
*****
রাত নির্জন , নিস্তব্ধ  আকাশ
তারারা নিশ্চল, নিঃশব্দ বাতাস
নিথর ধরাতল, বনানী নিস্পন্দ
নির্বিকার জলরাশি,  সময় নির্দয়। 


নির্বাক স্বপ্ন, মানুষ নিরুপায়
নীরব  কন্ঠ, প্রচেষ্টা নিশ্চেষ্ট
নির্লোভ হৃদয়, মন নির্ভয়
নির্ভিক চলন , নির্ভুল নিশ্চয়।
*********************



























একজন সাধারণ মানুষের আত্মকথা

 একজন সাধারণ মানুষের আত্মকথা
*************************


আমি একজন মুসলমান  দোকানদার, বলা যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত একজন মানুষ। ছোট্ট  পরিবার -- মা , এক মেয়ে, এক ছেলে আর স্ত্রী। দিন কেটে যায় কষ্টে সৃষ্টে। সংসারে সুখ না থাকলেও শান্তি ছিল। মাঝে মধ্যে মনে হত আরও কিছু কিছু জিনিষ পত্র দোকানে রাখতে পারলে, ভাল চলত। কিন্তু তার জন্য কিছু যে টাকা খাটানো দরকার তা পাবার কোন রাস্তা নেই। 
--
একদিন খবরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন  দেখলাম , একটা কিডনির জন্য  আকুল আবেদন।  মনে হলো একটা কিডনির বদলে কিছু টাকা পেয়ে গেলে মন্দ হয়না। দোকানটা একটু ভালো করে চালানো যাবে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা জীবনটা একটুখানি আলোর মুখ দেখবে, সামান্য  স্বস্তি পাওয়া  যায়।
--
পরের দিন কাউকে কিছু না বলে সেই ঠিকানা তে দেখা  করতে গেলাম। ভয়ে ভয়ে পাছে সুযোগটা ফসকে যায়। খুঁজতে  খুঁজতে গিয়ে উপস্থিত হলাম একটা বস্তির ভাঙ্গা ঘরের দরজায় । রুগী ছেড়া খোড়া, তালি মারা বিছানাতে ধুঁকছে  আর  তার রুগ্ন বৌটা অলস ভাবে হাত পাখা নেড়ে হাওয়া করছে। একটা বুড়ো মানুস দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে বিড়ি খাচ্ছিল। বছর পনেরোর একটি মেয়ে এক কোনে রান্নার যোগাড়ে ব্যস্ত।  
--
আমার আসার কারন বলাতে , একটা  খুশীর হওয়া বয়ে গেল বদ্ধ ঘরের  মধ্যে। বুড়ো মানুষটি, রুগীর বাবা, এগিয়ে এলো কথা পাকাপাকি করার জন্য। কিন্তু নাম বলার সাথে  সাথে তিনি চেঁচিয়ে গালিগালাজ করতে শুরু করে দিলেন। কারণ আমার নামটাই বলে দিল যে আমি মুসলমান। চার পাশ থেকে লোকজন ছুটে এলো সে চেঁচামিচিতে। রুগীর বউ আর মেয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো। মেয়ে কেঁদে কেঁদে বলল, " পয়সার অভাবে কিডনি যোগাড় করা  অসম্ভব আমাদের  কাছে। বাবার দুটো কিডনি ই খারাপ, একটা অন্তত  না বদলালে, বাবাতো বাঁচবেই না।" বউ বললে, "ভগবান যদিবা দয়া করে একজন কে পাঠিয়েছে, যে অল্প পয়সায়ে কিডনি দিতে রাজি, তা এই বুড়োর গোঁয়ারতুমিতে কাজে লাগানো যাবেনা।"
--
বস্তির অন্য লোকজন দ্বিধা বিভক্ত। কেউ বলে, "হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলা উচিত নয়। " কেউ বলে, "আরে তাই বলে জাত দিতে হবে, সে জীবনে মূল্য কি। " গোলমাল দেখে আমি চলে আসছিলাম, অল্প পয়সা পাবো জেনেও এসেছিলাম। কিন্তু এই রকম সমস্যা তে পড়ার কথাতো ভাবিনি। দরকার নেই ঝামেলাতে। কিন্তু মেয়েটি দুরে এসে আমার পা দুটি জড়িয়ে ধরলো ," তুমি যেওনা কাকা, তাহলে আমার বাবা আর বাচবেনা। মা তো টিবি রুগী, সেও মরে যাবে। তাহলে আমার কি হবে।" চোখের সামনে আমার ছেলে মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো। একটা কিডনি নিয়েও তো মানুষ বাঁচে।  বাবা মা না থাকলে এই মেয়েটার কি হবে। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম বিনা পয়সাতে কিডনি দেবো, তাহলে আর বেশী কেউ ঝামেলা করবেনা হয়তো।
--
তাছাড়া দেয়ার  মতো পয়সা যোগাড় করাও তো এদের পক্ষে মুশকিল।এবার মানুষটিকে জানালাম, "ঠিক আছে চাচা, আমি বিনা পয়সাতে কিডনি দেবো। তুমি আর আপত্তি করো না।  তোমার ছেলের কিছু হলে এই মেয়েটাকে দেখবে কে।" আসেপাশের লোকজন ও তখন তাঁকে বোঝাতে লাগলো।
--
অবশেষে বুড়োমানুষটি মত দিলেন। মেয়েটির চোখে জল , মুখে  কৃতজ্ঞতার মৃদু সলজ্জ হাসি। আমার মনে হলো এই হাসিটা অমূল্য , এটাই আমার বড় পাওয়া। সব  ঠিকঠাক করে বাড়ীতে ফিরে এলাম। বাড়ীতে কেবল মা আর স্ত্রীকে সব জানালাম।  অনেক কষ্টে তাদের বুঝিয়ে, চোখের জল মুছিয়ে ফিরে গেলাম।
--
নির্দিষ্ট দিনে আমার একটা কিডনি ওই মেয়েটির বাবার শরীরে দেওয়া হলো।  হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা আর নার্স দিদিমনিরা সবাই খুব ভালো ভাবে আমাদের দুজনকে চিকিত্সা করেছিলেন। অনেক ওষুধপত্র বিনা পয়সাতে ও দিয়েছিলেন।
--
সুস্থ   হয়ে গ্রামে ফিরলাম। কিন্তু এবারে  বাঁধলো গন্ডগোল আমার গ্রামে। সব জানাজানি  হয়ে গেছিলো। গ্রামের মাতব্বরেরা বিচার সভা ডাকলো আমার বিচার করার জন্য,"কেন আমি, বিধর্মীকে কিডনি দিয়েছি , আল্লাতালার অপমান করেছি। "
আমি বললাম ,"আল্লাতালা আমাদের ভালো কাজ করতে বোলেছে , অমি তো  ভালো কাজ করেছি। একটা মানুষকে, একটা পরিবারকে বাঁচিয়েছি। সব মানুষের গায়ে একই লাল রক্ত বইছে, সব মানুষের দেহে একই যন্ত্রপাতি আছে, তারা একইভাবে কাজ করে, তবে এত বিভেদ , বিদ্বেষ কেন ! একটা ভালো কাজ করতে এত বাধা কেন ! আমরা তো সবাই একটাই জাতি , মানুষ জাতি।   আমাদের সবাইয়ের একটাই ধর্ম, মানব ধর্ম !"
--
গ্রামের বেশীর ভাগ লোক আমার পক্ষে সায় দেওয়াতে, মাতব্বারেরা আর মৌলোভীরা একদম ট্যাঁ  ফু করতে সাহস পেলোনা। বলতে গেলে আমার গ্রামে আমি যেন হিরো হয়ে গেলাম। গর্বে আমার পরিবারের সকলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। 
****************************************************************************
*********************