30 Jan 2016

মহাজাগর

মহাজাগর  
*******
আমাদের পরিচয় মানুষ, 
মানবিকতাই যার ধর্ম।
সকলেরই শরীরে প্রবাহিত
যে রক্ত লাল তার বর্ণ
আদিম কাল থেকে বিবর্তনের
লব্ধ জ্ঞানই আমাদের গর্ব।  
--
সকলের ক্ষুধার অন্ন
মাঠ ভরা সোনার ফসল। 
পরণের মোটা কাপড়,
শীত, গ্রীষ্ম, জল। 
সরল জীবন, সৃষ্টির সুখ,
রোপিত হবে কত ফুল, কত ফল।
--
বারুদের গন্ধ নয়, নির্মল বাতাস,
ভেজা আকাশে সাতরঙা রামধনু।
রক্ত নয়, ঘাসের ডগায়,
ভোরের মুক্তঝরা শিশির বিন্দু।
হিংসা নয়, বিদ্বেষ নয়,
বইবে ভালবাসার সিন্ধু।
--
আমদের সকলের বাস,
একটি মাত্র গ্রহে।
পৃথিবী তার নাম,
স্থান বিশ্ব ব্রম্ভান্ডে।
মাটির এই ধরনীতে যখন আসবে মহাজাগর,
মহামিলন ঘটবে সেই মহালগ্নে। 
--
সেই আমাদের একমাত্র স্বপ্ন,
একটি মাত্র আশা। 
সেই আমাদের পরম সুখ,
আজীবনের প্রত্যাশা।
যেদিন বাজবে সে মহাডঙ্কা,
জাগবে জীবনের প্রতি অকৃত্তিম ভালবাসা। 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------














27 Jan 2016

বহেনজী ভাগ গই


বহেনজী ভাগ গই
************
  
মুক্তি আর স্মৃতি দুই বান্ধবী ইডেনগার্ডেন সামনে দেখা করল, দুজনেরই সঙ্গে দুটি ডাউস হ্যান্ড ব্যাগ। ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাস। বেলা ১/২ টো হবে। বেশ কনকনে ঠান্ডা বাতাস। কিন্তু কারো গায়েই গরম জামা কাপড় নেই, পরনে নেহাৎ আটপৌরে শাড়ি। মোটের উপর সাদাসিদে বেশবাস। দুই বন্ধুই একটি রাজনৈতিক পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী। সেই সংক্রান্ত কথাবার্তা বলা ও পার্টির কাগজ পত্র আদান প্রদানের জন্য দেখা করেছিল। ভেবেছিল লোকে ভাববে হয়ত দুই বান্ধবী কলেজ ছুটির পর শীতের দুপুর টা উপভোগ করতে এসেছে।
--

ব্যাপার ঠিকঠাক চলছিল। অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই কাগজ পত্র আদান প্রদান করা হয়ে গেল। কথাবার্তাও চলছিল গল্পের ভঙ্গীতে। চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল দু জনেই। হটাত মুক্তি বলে, "পিছনে তাকাস না, একটা লোক আমাদের বেশ কিছক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে। ভাব গতিক টা সন্দেহ জনক।" দুজনে বিষয় বদলে মজার গল্প করতে করতে উঠে দাঁড়াল। এবার স্মৃতি ও লোকটাকে দেখে নিয়েছে। লোকটাকে নজর রাখতে রাখতে, হাসি মজা করতে করতে হাঁটতে শুরু করল। লোকটা তাদের পিছু পিছু চলতে থাকে।
--

অনেক ক্ষণ গার্ডেনের এদিক ওদিক হাঁটার পরও লোকটা তাদের পিছু ছাড়ে না। এখানে ওখানে অনেক লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গল্প গুজব করছে। একটি জায়গায় এক স্বামী স্ত্রী নিজেদের তিনটি বাচ্চাকে খেলাছিল। দুই বন্ধু তাদের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। তারপর বাচ্চাগুলির সাথে খেলতে শুরু করে।
--

লোকটি কিন্তু তাদের পিছনেই একটি বেঞ্চে বসে নজর রাখতে থাকে। তারা উঠে দাঁড়াবার সাথে সাথে সে ও উঠে পিছু নেয়। এবার মুক্তি আর স্মৃতি বেশ চড়া গলায় বলে," কি ব্যাপার বলুন তো, তখন থেকে আমাদের পিছু নিয়েছেন কেন? আপনার মতলব টা কি ?"
--

চার পাশ থেকে লোকজন উঠে আসে, "কি হয়েছে দিদি ? কি, মশাই, ওনাদের পেছনে লেগেছেন কেন ?" লোকটি বেগতিক দেখে পকেট থেকে পুলিশের আই ডি কার্ড বার করে, বলে," আরে দাদা, আভি দিন কাল বহুত খারাব হ্যায়। অভ বাজে লড়কীয়া খরিদ্বার কে লিয়ে আসে।" "আমাদের কি আপনি তাই ভেবেছেন ! কলেজ ছুটি হয়ে গেছে তাই আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি", জোর গলায় প্রতিবাদ করে দুজন, যদিও ভেতরে ভেতরে পুলিশের আইডেনটিটি কার্ডটা দেখে প্রমাদ গোনে। শেষে কেঁচো খুড়তে সাপ না বেরিয়ে পড়ে। দুজনের ব্যাগেই ভর্তি পার্টির জরুরী কাগজ পত্র।
 --

চার পাশের লোকজন ওদের পক্ষেই  কথা বলছিল,"থাক দাদা আর বড়াই করবেন না, আপনাদের কাজই সাধারণ মানুষদের হয়রানি করা। যান যান নিজের কাজে যান।" দুই বন্ধু সবাই কে ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি পা বাড়ায়। ভীড় পার হতেই ওদের পিছন পিছন লোকটা আবার হাঁটতে থাকে। দুজনে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নেয়, "ভাগ্যে আমাদের রাজনৈতিক কর্মী বলে সন্দেহ করেনি। ভয় দেখিয়ে ধান্ধা করার চেষ্টা করছে। বুদ্ধি করে এর হাত থেকে ছাড়া পেতে হবে।"
--

ওরা দাঁড়িয়ে যায়, মোলায়েম গলায় বলে, "কি ভাইয়া আবার কি হলো। আপনার বোনেরা কি বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যায় না। আমরা তো আপনার বোনের মত, ভাই হয়ে এই রকম পিছু নেওয়া কি শোভন দেখায়। তাকিয়ে দেখুন, ওই ছেলেরা কিন্তু এখনো লক্ষ্য করছে। এখানে রাস্তার মাঝে এসে যদি আবার আপনাকে ঘিরে ধরে তাহলে ভাল হবে। তার থেকে আপনি আপনার কাজে যান। আমাদেরও বাড়ি যেতে হবে। চলি ভাইয়া, আবার পরে একদিন দেখা হবে।" লোকটি কি ভেবে পিছন দিকে হাঁটতে শুরু করে। মুক্তি আর স্মৃতি উল্টো ফুটপাতে বাস স্ট্যান্ডের দিকে রওনা হয়।
--

একটু যাওয়ার পরই হটাত পেছন থেকে ডাক শোনা যায়,"বহেনজী, বহেনজী, শুনিয়ে।" শুনতে না পাবার ভান করে ওরা জোরে পা চালায়। কাকস্য পরিবেদনা। পিছন পিছন আওয়াজ আসতেই থাকে, "বহেনজী শুনিয়ে না, ঠ্যারিইয়ে না।" আর এড়ানো যাবেনা বুঝে ওরা দাঁড়িয়ে যায়,"আবার কি ভাইয়া, আমাদের তো দেরী হয়ে যাচ্ছে। কাল কলেজ আছে। বাড়ি ফিরে পড়তে হবে।" "আপলোগনে মুঝে ভাইয়া বোলা। মেরা ফর্জ হ্যায় আপলোগ কো কুছ খিলানা।""না, না, আমাদের একদম খিদে নেই। কিছু খাওয়াতে হবে না।" কিন্তু সে যে 'পাগলারে সাঁকো নাড়াস না' র অবস্থা। বহেনজীদের না খাইয়ে সে কিছুতেই ছাড়বে না। আসল মত্লব  বোঝা দুষ্কর। যেন তেন প্রকারেন তারা পালাতে পারলে বাঁচে।
--

কিছুক্ষণ কালক্ষেপণের পর রফা হলো বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি কোল্ড ড্রিংকের স্টল থেকে কোকাকলা খাওয়া হবে। স্মৃতি আর মুক্তি পরস্পর কে ইশারা করে প্ল্যান ঠিক করে ফেলে। যত তাড়া তাড়ি সম্ভব চো  চো করে দুজন নিজেদের বোতল গুলি খালি করে ফেলে। পুলিশ ভাইয়া ততক্ষণে পকেট থেকে একশ টাকার নোট্ বার করে দিয়ে, সবেমাত্র নিজের বোতলে সিপ্ করতে শুরু করেছে। এদিকে একটা বাস  বাসস্ট্যান্ডের  মুখ থেকে ঘুরতে শুরু করছে। কোনমতে বোতল দুটি নামিয়ে দিয়ে দুজনে দৌড়ে গিয়ে লাফ দিয়ে চলন্ত বাসে উঠে পড়ে। ভাইয়া হটাত খেয়াল করে বহেনজিরা বাসে উঠে পড়েছে।
--

প্রথমে সে হতভম্ব হয়ে পড়ে। কি করেবে ভেবে পায় না - নিজের কোকাকোলা খাবে, না টাকার বাকি খুচরো টা আদায় করবে, না বাসে উঠবে। চীত্কার করে গালি গালাজ করতে থাকে, "এ বাস, রোককে রোককে, এই শূয়ার কা অউলাদ...... জলদি মেরে ছুট্টা দো।  এ শালে .... কন্ডাক্টার বাস রোক না।..... বহেজিলোগ ভাগ রহি হ্যায়।" মুক্তিদের ইশারায় কন্ডাক্টার কি বুঝলেন কে যানে। হেসে জোরে জোরে ঘণ্টি বাজিয়ে দিলেন। ড্রাইভার ও ফুল স্পিডে বাস চালিয়ে দিলেন।
--

পুলিশ ভাইয়ার ওদের দিকে তাকিয়ে রাগে বিড় বিড় করে কি সব বকতে থাকে। ভাব দেখে মনে হচ্ছিল,'জল থেকে আগুনে পড়বে, না আগুন থেকে জলে পড়বে',ঠিক করতে পারছেনা । প্রথমে স্মৃতিদের দের নিজেদের অভদ্রতায় একটু খারাপ লাগছিল। কিন্তু ভাইয়াজির চেহারার ভাব গতিক দেখে বুঝতে পারল আজ তাদের একটা বড় বিপদ কাটল। তারপর ৪/৫ বার বাস বদল করে, অনেক রাস্তা ঘুরে ফিরে নিজেদের গন্তব্যে গেল।
__________________________________________________________________________________________



























  

































24 Jan 2016

খরা - 2

খরা
***
জীবনে চলার পথে পথে
অনিশ্চয়তার বাঁকে বাঁকে,
মনের দুর্বলতার ফোকর
গলে, খরার বান ডাকে।
--

কে জানে কোন সুদূরে,
আবেগ রা যায় ভেসে, 
ভাবনা গুলি হারিয়ে যায়
গহন অন্ধকার আকাশে।
--

ভোরের বাতাসের শব্দ
জাগায় না শিহরণ,
সাগরের দুরন্ত হিল্লোল
তোলে না আলোড়ন।
--

জোত্স্নার গন্ধ
ছড়ায় না পুলক,
কোথায় তারাদের  
ঝিলিমিলি ঝলক!
--

শিশির ভেজা মাটি,
আজ যেন শুষ্ক ফুটিফাটা,
দাঁড়িয়ে পাতাঝরা গাছেদের কঙ্কাল
নেই সবুজের ছিটেফোঁটা। 
 --

কল্পনারা পাখনা মেলেনা
চারিধারে ঘোর অমানিশা,
কবে হাসবে নতুন সূর্য
দেখাবে নতুন পথের দিশা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------













7 Jan 2016

একা চাঁদ কাঁদে

একা চাঁদ কাঁদে
**********
সাথী হারা চাঁদ আজ একা কাঁদে আকাশে,
তারাদের খোঁজে ভেসে বেড়ায় মেঘের সাগরে
বিরহে ঝাঁপিয়ে পড়ে পৃথিবীর কোলে অবশেষে,
বিশাল সাগরে উন্মত্ত ঢেউয়ের দল সাদরে 
বরণ করে নেয় তারে, আনন্দে ভালবেসে।
--
বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ে তরঙ্গের তালে তালে
তারই টানে আবার ফিরে যায় গভীর সাগর জলে
প্রহরের পর প্রহর কাটে, উল্লসিত চাঁদের খেলা চলে,
দূর থেকে দূরান্তে ভেসে যায়, গভীর থেকে গভীরতর জলে
শান্ত সমাহিত সমুদ্রে তারাদের আবার খোঁজ মেলে।
--
অভিমানী চাঁদ অবাক বিস্ময়ে চায় চির সাথীদের দিকে
ঝিকি মিকি তারাদের দল যেন হাসে তাকে ঘিরে ধরে
মেতে ওঠে ধুসর মাটি, দিগন্তে বাতাস দোলা দিয়ে যায় বনানীকে,    
প্রকৃতি জানে সময় আগত, জেগে ওঠে আকাশ মাথার উপরে
সূর্য্য আরও একটা নতুন দিনের আলো উপহার দেয় পৃথিবীকে।
-------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------


















4 Jan 2016

একাকিত্ব

একাকিত্ব
******

আমরা সকলে একটি বাড়ীতে থাকি,
প্রতিটি ঘর যেন এক একটা বিছিন্ন সত্তা।
আমরা সবাই একই পাড়ার পড়শি,
কারোর মুখ কেউ ঠিক ঠাক চিনিনা।
আমরা অনেকে একই জেলার অধিবাসী,
কেউ কাউকে আপন ভাবি না।
আমরা প্রায় চার কোটি একই প্রদেশে থাকি, 
কিন্তু একে অপরের যাপন বুঝিনা। 
আমরা শত কোটির দেশ,
এক প্রান্তের লোক অপর প্রান্তে বিদেশী।
আমরা কত সহস্র কোটি একই মহাদেশে বসত করি
সদাই একে অন্যের বিরুধ্বে অস্ত্র শানাই। 
আমরা একই গ্রহের মানুষ
মনুষ্যত্ব কে দাসত্বের শেকলে বেঁধে, যেন এক একটা বিছিন্ন দ্বীপ।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------