30 Oct 2016

দিশারী - পর্ব 4

দিশারী - পর্ব ৪
************
কখন ভোর হল দিশারী খেয়াল ই করল না। হটাৎ এক বিদঘুটে চিৎকারে সম্বিত ফিরে পেল। তাকিয়ে দেখল গেটের সামনে একটি গোলাকার জমাদারনী বীভৎস মুখ বিকৃত করে গালি দিচ্ছে, " এই কুত্তীর বাচ্চা, চোখের মাথা খেয়েছিস নাকি ? দেখছিস না সকাল হয়ে গেছে,গেট খুলতে এসেছি। ফাইলে না বসে গেট জুড়ে বসে আছিস কেন।" দিশারী তাকিয়ে দেখে ঘরের মাঝখানে সবাই একটা লাইনে বসতে শুরু করেছে। দুটি সর্দারনী গোছের মেয়ে চেঁচাচ্ছে," ফাইল, ফাইল। এই শালী ওখানে কি করছিস। ফাইলে বস তাড়াতাড়ি। "বইসতেছি, তা শুধু মুধু সক্কাল বেলা সকলে মেইলে গাল পারতেছো কেনে ?"
 --
"তব্বেরে, হারামীর বাচ্চা, খুব সাহস দেখি ", বলে তেড়ে গিয়ে তার চুলের ঝুঁটি ধরে। খাপরদার আমার বাপেরে গাল পারবেনি বলতেছি।" এদিকে গেট খুলে জমাদারনী দুই চেলা (দালাল বন্দিনী ) নিয়ে ভেতরে ঢোকে, "কি হয়েছে রে আনোয়ারা, এত গোলমাল কিসের ?" একসাথে কয়েক জন বন্দিনী দিশারীর পক্ষ নিয়ে বলে," ও বেচারা  মাত্র কাল এসেছে, কিছু জানে না। আনোয়ারা খামোখা ওর পেছনে পড়েছে।"
--
জোটবদ্ধ প্রতিবাদের মুখে জমাদারনী বিজয়া আর শিখা সহ সব দালালরা ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। "ও, নতুন বটে। ছাড়ান দে আনোয়ারা। গুনতি কর।" একজন সমবয়সী মেয়ে দিশারীর হাত ধরে টেনে লাইনে বসিয়ে দেয়। গুনতি করে খাতায় লিখে নেয় আর একটি দালাল। নতুন রা সব গেটের কাছে লাইন দে, 'কেস টেবিলে' যাবার জন্য," বলে গোলগাল ওয়ার্ডারটি তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চলে যায়।
--
দিশারী গেটের কাছে 'কেস টেবিলে' যাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে গেট দিয়ে একজন মোটাসোটা ধোপদুরস্থ মহিলা ঢোকেন। সব ওয়ার্ডার আর দালালরা হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বলে,"নমস্কার মেট্রন মা।" মহিলা তাদের দিকে কৃপাদৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু হেসে তার অফিসে ঢুকে যায়। হাসপাতাল টাই ছিল মেট্রনের অফিস ঘর।
--
তারপর ছেলে জমাদার বাইরে থেকে ঘন্টি বাজালে গেট খোলা হয়। এক জমাদারনী নতুন বন্দিনীদের নিয়ে তার সাথে ছেলেদের ওয়ার্ডের যায়। সেখানে বড় একটা টেবিলে ডেপুটি জেলার, বড় জমাদার আর এক / দুজন অফিস কর্মী ছিল। উল্টো দিকে নতুন বন্দীরাও লাইন দিয়ে বসে। সবায়ের নাম ধরে ডেকে জাবদা একটা খাতা থেকে তথ্য মিলিয়ে, কি সব লিখছিল আর একটা জাবদা খাতায়। প্রত্যেকের একটা বড় কাগজে (যাকে জেলে টিকিট বলা হত ) প্রয়োজনীয় বিষয় নোট করে নিচ্ছিল।
--
দিশারী একটু যেন আসার আলো দেখল। এইবারে সে সব কথা বলতে পারবে, তাহলে নিশ্চয় বাড়ী ফেরার একটা উপায় হবে। তাকে ডেকে নাম ধাম, বাবার নাম সব লেখা হল, কিন্তু সে তার গ্রামের নাম ছাড়া থানা, পোষ্ট অফিস, জেলা কিছুই বলতে পারেনা। ডেপুটি জেলার তাচ্ছিল্য ভরে জিজ্ঞাসা, "কি দুষ্কর্ম করে এসেছিস ?" " চাচা আমি সুন্দরবনের মেয়া। কলকাতায় খেটে খেইতে এইসেছিনু। নোকের বাড়ী কাজ কইরতেছিনু। গেরাম থেইকে এইসে পথ হেইরে গেইছে। মোরে শেলদা ইস্টিশনে যদি পৌঁছায়ে দেন, আমি আমার কাজের বাড়ী আর গেরামে দুয়োই খানে যেইতে পাইরব। দয়া করেন, অনেক তাহইলে আল্লা আপনের অনেক দোওয়া কইরবেন। "
--
খ্যাক খ্যাক করে বিদ্রূপের হাসি হাসে টেবিলের সকলে মিলে। একজন বলে," লেখ হারান কেস। আর একজন বলে, "যত দিন না তোর বাবা মা কোর্টে জজের কাছে উপযুক্ত প্রমান দিতে পারবে ততদিন তোকে এখানেই থাকতে হবে। "সরকার এখন তোর অভিভাবক। তোকে খেতে পরতেও দেবে চিন্তা নেই। তোদের মত কত অসহায় মেয়েদের এভাবেই সরকার সব বিপদের থেকে রক্ষা করে।" "কিন্তুক মোর আব্বা আম্মা জানবেক কি কইরে, যে আমি ইখনে রইছি।"
উত্তর আসে, "যা যা কাজের সময় গোল করিস না। এটাই হল আইন " জেনানা ওয়ার্ডে ফেরার পথে দিশারী ভাবে, 'এ কেমন আইন! কেমন ই বা সরকার! তারা নির্দোষ মানুষ কে রক্ষা করার নামে অন্ধ কূপে বন্দী করে রাখে!
--
ধীরে ধীরে দিশারী তার নতুন পরিস্থিতিতে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে লাগল। তাকে একটা এলুমুনিয়ামের থালা, একটা কম্বল আর একটা বস্তার মত মোটা লাল পাড় সাদা শাড়ী দেওয়া হল। সকালে একমুঠ পোকা ধরা ছোলাসেদ্ধ, কাঁচা চিড়ে বা এক টুকরো পাউরুটি, বা এক ডাব্বু বিভিন্ন ফসলের মেশানো খিচুড়ি দেওয়া হত। দুপুরে এক ডাব্বু ভাত, ৫০গ্রাম মত, জলের মত ডাল আর, মুখে দেওয়া অযোগ্য সবজির ঘ্যাট, আর রাতে বাজরা/ জোয়ারের আধা কাঁচা তিনটে রুটি ছিল বরাদ্দ। গরীবের মেয়ে সে, বাড়ীতে অতি সাধারণ মানুষরা যা খায় তাই খেত, কিন্তু তাতে যত্ন আর স্নেহের ছোঁয়া থাকত। এখানে খাবার পশুর ও খাওয়ার অযোগ্য ছিল, তার পরিমাণ এতই অকিঞ্চিৎকর, যে সহ বন্দিনীদের মত পেটের আগুন কখন নিভতো না।
--
সকালে ঘন্টা ২/৩ মত তারা ছাড়া থাকত। সেই সময়ের মধ্যে প্রায় যুদ্ধ করে স্নান থেকে শুরু করে সকাল ও দুপুরের খাবার খেয়ে এক থালা খাওয়ার জল নিতে নিতেই লক আপ এর সময় হয়ে যেত। আবার বিকালে ঘন্টা খানেকের জন্য ছাড়া পেত রাতের খাবার খেয়ে আর খাওয়ার জল নিতে নিতেই লক আপের সময় হয়ে যেত। সন্ধ্যে বেলায় সহ বন্দিনীদের সাথে পরস্পরের সাথে নীচু গলায় সুখ দুঃখ বাটা, আর রাতে এক চিলতে জায়গায় আধ শোওয়া হয়ে ঘুমান। এর ওপর ছিল জেলের দালাল বাহিনী আর মেট্রনের নির্দেশ মত ওয়ার্ডারদের অত্যাচার। আর এখানে খিদের জ্বালায় একটা  বাড়তি রুটি বা এক মুঠো ভাতের জন্য, একটু বাড়তি সুবিধার বিনিময়ে দালাল তৈরী করা খুবই সহজ ব্যাপার ছিল।
--
গরাদের ধারের ভাল জায়গা গুলি থাকত দালালদের জন্য। যদি ৭৫ জন লোকের থাকার ঘরে ২০০ লোক কে থাকতে হয় আর তার আধা জায়গা গোটা ৭/৮ লোক দখল করে নেয়, তবে বাকীদের বস্তাবন্দীর মত রাত কাটান ছাড়ান পথ থাকেনা। মাটির মেয়ে দিশারী নির্বাক চিত্তে সব সহ্য করত। কিন্তু প্রকৃতির থেকে বিচ্ছিন্নতা টা অসহ্য লাগত, কিছুতেই  মেনে নিতে পারত না। গেটের ফাঁক দিয়ে এক টুকরো আকাশ দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ত, তাতে রাতের শোবার এক টুকরো জায়গা দখল হয়ে গেলেও আপত্তি ছিল না। দালালদের জন্য সেটাও অনেক সময় সম্ভব হত না।আর ঘরের এক কোনে পাঁচিল ঘেরা একটা জায়গা ছিল যেটা টয়লেট হিসেবে ব্যবহার হত তার দুর্গন্ধে দিশারীর পেটের নাড়ি উল্টে আসতো। মনে পড়ত গ্রামে তাদের নিকান, পরিচ্ছন্ন ছোট্ট কুটিরের কথা।
--
দ্বিতীয় রাতে না জেনে দালাদের নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গায় সে তার জিনিস পত্র নিয়ে রওনা দিয়েছিল। পাশ থেকে শোভা  নামে একটি মেয়ে তার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়, "আরে,আরে ওদিক খবরদার যেও না। ওগুলি আনোয়ারা, কাঁদা  মন্ডল, পুঁটিরানী, আসগরি, আরতি, সমেদা দের জায়গা। ওখানে কারও যাওয়া নিষেধ, গেলে মেরে রেখে দেবে। ওরা মেট্রন আর ওয়ার্ডারদের খুব প্রিয়, তাদের সব হুকুম তালিম করে, একে মারা,তাকে সেল বা পাগল বাড়ীতে ঢোকান, কাকে কম খাবার দেবে, কাকে বেশী সব কিছু। আমাদের খাবার মেরে  মেট্রন /ওয়ার্ডারদের দেয়, তাদের গরু/মোষ খাবার জন্য আর অসুস্থদের ডাক্তারবাবু ডায়েট লিখে দিলে, সেখান থেকে ডিম, বিস্কুট, দুধ, মাছ তাদের না দিয়ে মেট্রন,ওয়ার্ডারদের দেয়। কারো বাড়ী থেকে খাবার বা জিনিস পত্র এলেও নিয়ে ওদের দেয়। ওরা হল জেলের দালাল। ওদের ধারে পাশে যাবি না, বিপদে পড়বি। হয় দালালের দলে নাম লেখাতে হবে নয় মারধর খেতে হবে। তাই ওদের সব সময় এড়িয়ে চলবি।"
--
দিশারী শোভার, সাথেই থাকত। আস্তে আস্তে তাদের সাথে আরও শ্যামলী, মীরা,শান্তিবাই, শ্যামবাই, বেলা, হাওয়া বিবি,শান্তি মাসি  আরও অনেকে জুটল। দুই মীরার একজন বাংলা দেশের মেয়ে, তার মতোই হারান কেস। আর এক  মীরা ছিল রেপ কেসের ভিক্টিম। যে তাকে রেপ করেছিল সে মুক্ত হয়ে আরও কতজনের সর্বনাশ করে বেড়াচ্ছে কে জানে । আর মীরা তার দেওয়া হাড় জিরজিরে একটা বাচ্চাকে বুকের  মধ্যে অপরিসীম মমতায় আঁকড়ে ধরে অন্ধ কূপে তিল তিল করে মরণের দিকে এগিয়ে চলেছে। সমাজ একজন ধর্ষক কে মেনে নিচ্ছে কিন্তু ধর্ষিতাকে, বিশেষ করে একজন কুমারী মা কে মেনে নেবে না বলে মীরার গরীব বাড়ীর লোক তাকে বাড়ীতে নিয়ে যেতে ভয় পেয়েছে। সরকারি তত্ত্বাবধানে জেলে ফেলে রেখে দিয়েছে।বেলা চুরি কেস এ আটক। শান্তিবাই / শ্যামবাই খুনের কেসে ইত্যাদি। লক্ষ্মী ডাকাতি কেসে।        
--
বেলা চুরি না করেও মিথ্যা আরোপে আটক। সবাই বলে ও যদি জজের সামনে চুরির অভিযোগ স্বীকার করে নিত, তাহলে ১০/১৫ দিনের সাজা খেটে বেরিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ও তা করেনি, তাই এখন জেলে পচছে। "তা, যে চুরি কইরেনি, সে কেনেই বা বইলবে কইরেছে। সম্মানে লাগবেনি। আর এ কেমন বিচার ধারা, অন্যায় না কইরে মানতি হবে,"  দিশারী বলে। "তা হইলে তুই /আমি কি অন্যায় করসি, ক দেহি। আর শ্যামলী অর বাপের অমতে বিয়া করসে। অর বাপ নাবালিকা কইয়া অরে, জ্যালে দিসে। শোভারে অদের গাঁয়ের জোতদারের ব্যাটা অরে বিয়া কইরবার কথা কইয়া নষ্ট করসে। পোয়াতি হইয়া পরলে বড়লোকের ব্যাটা উলটাপালটা কইয়া গাঁয়ের লোকজনরে কু বুঝাইয়া অরে জ্যালে পুরসে। এইজে হাওয়া বিবি, উয়ারে আর উয়ার বরেরে মিছামিছি খুনের ক্যাস দিসে। শোনিচারিরে বাপের বসতবাটি আর জমিটুক হরপের লাইগ্যা জমিন্দারে খুনের কেসে জড়াইসে। আসলে এ দুনিয়ায় বিসার নাই,"মীরা বলে। দিশারী যত দেখে, শোনে ততই অবাক হয়। ভাবে এ কেমন দুনিয়া!
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
(চলবে)








  

  






   

26 Oct 2016

দিশারী - পর্ব 3

দিশারী - পর্ব ৩
************
রুবিনা দিশারীকে বেলেঘাটায় এক মধ্যবিত্ত বৃদ্ধ দম্পতির কাছে কাজে দিল। তাঁদের মেয়ের বাড়ীতে সে আয়ার কাজ করে। দিশারীকে ঘরের সব কাজ করতে হত, রান্না থেকে শুরু করে কাপড় কাঁচা, বাসন মাজা, ঘর পরিস্কার সবকিছু।
হাড় ভাঙা খাটুনিতে অভ্যস্ত গ্রামের মেয়ে সে। তাদের তিনটি লোকের জন্য সে এই কাজ তার কাছে কোন সমস্যা ছিল না। বৃদ্ধ দম্পতি ভাল মানুষ ছিল।
--
মেয়ের বাড়ী যাবার সময় তাকে সঙ্গে নিয়ে যেত। সেই বাড়ীর বারান্দা থেকে গঙ্গার ঘাট দেখতে পাওয়া যেত। রুবিনা বুয়ার সাথে দেখা হওয়া ছাড়া ঘাটের দিকে চেয়ে সূর্যাস্ত দেখতে তার খুব ভাল লাগত। তাছাড়া শেয়ালদায় বাজার করতে যাওয়া হত। চিড়িয়াখানা ইত্যাদি  নানা জায়গায় মেয়ের সাথে বেড়াতে যাবার সময় ও তাকে সাথে নিত। দম্পতির গাছের শখ ছিল। বাড়ীতে ছাদের উপর টবে গাছ ছিল। মাটির সাথে নাড়ির টান, তাই ধীরে ধীরে গাছের পরিচর্যার কাজ দিশারী আস্তে আস্তে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। তিনজনে মিলে সেখানে অনেক সময় কাটাত, তাদের তার জীবনের সব গল্প করে  দিশারী মন হাল্কা করত। 
--
ঈদের সময় নিজের জমানো মাইনের টাকা নিয়ে রুবিনার সাথে গ্রামে গেল। বাড়ীর সবাই খুশীতে আত্মহারা। বিশেষত  ফকিরের আনন্দ যেন আর ধরে না, মেয়েকে এক মিনিট ও কাছ ছাড়া করতে চাইত না। কিন্তু কোথা দিয়ে উৎসবের দশটা দিন কেটে গেল। তারপর সেই কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের সাথে আবার ছাড়াছাড়ি। উন্মুক্ত খোলা আকাশ আর নদীর পাড় ছেড়ে বদ্ধ শহর জীবন।
--
ছয় মাস বাদে আবার গ্রামে ফেরার সময় রুবিনা তার সাথে যেতে পারল না। তার কাজের বাড়ীর লোকেদের সাথে সে কোথায়  যেন বেড়াতে গেল। রুবিনা তাকে শেয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেনে তুলে দিল। ঠিক হল দিন সাতেক বাদে সে নিজেই ফিরে আসবে। সবাই বার বার করে জিজ্ঞাসা করল "কিরে রাস্তা চিনে ঠিক মত ফিরতে পারবি তো।" "হ্যাগো, তোমাদের সাথ শেলডা বাজারে কত্তবার গেইছিনি, ঠিক চিনে নিব," - দিশারী আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
--
সে ঠিক মতই গ্রামে পৌঁছাল, কদিন মহা স্ফূর্তিতে কাটাল। মাইনের জমা টাকা আব্বার হাতে তুলে দিতে সে খুব তৃপ্ত বোধ করে। এবারে দিশারী ফেরার সময় ফকির জীবনে এই প্রথম বুক ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ল, "মা রে, কেমন যেন মনে হইছে তরে আর দেইখতে পাইরবনি। " "ইমন কথা বলনি আব্বা, তোমারে আমি কলকাতায় ভাল হাসপাতালে দ্যাখায়ে ভাল কইরে তুইলব," চোখের জলে বাপকে জড়িয়ে ধরে দিশারী বলে। ফকির চুপ করে যায়, মনে মনে কি এক অজানা আশঙ্কায় মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
--
ভাইরা ক্যানিং স্টেশন থেকে বোনকে আবার কলকাতা গামি ট্রেনে চাপিয়ে দেয়। সারাটা সময় দিশারীর অসুস্থ বাবার অসহায় মুখটা মনে পড়তে থাকে। কোনদিকে আর হুশ থাকেনা। কখন যে কোলকাতা পৌঁছে গেল খেয়াল ই রইল না। অন্যমনস্ক ভাবে ট্রেন থেকে নামল। ভীড়ের ঠ্যালায় যেদিকে নিয়ে যায় সেই দিকে চলতে শুরু করল। বেলেঘাটা যাবার বাসের রাস্তা কখন পার হয়ে কেমন যেন সম্মোহিত মানুষের মত হেঁটেই চলেছে। হটাৎ কানের কাছে একটা তীব্র আওয়াজ আর সেই সাথে এক প্রবল ধাক্কায় তার হুঁশ ফিরল।
--
তাকিয়ে দেখে তার চার পাশে ভীড় জমে গেছে।তাকে ধাক্কা দিয়েছিল যে মানুষ টি তাকে বকে ওঠে,"গিয়েছিলে তো এখনই বাসের তলায়, অন্ধের মত রাস্তা চলচ্ছ, লাগেনিত।" লজ্জিত মুখে দিশারী মাথা নেড়ে না করে, কৃতজ্ঞ চোখে তার দিকে তাকায়। "ভাল করে দেখে রাস্তা চল,"বলে লোকটি তার পথে চলে যায়, ভীড় ও কেটে যায়, পথিকরা যে যার পথে চলতে থাকে। এইবারে দিশারী ভাল করে চার পাশ তাকিয়ে দেখে, সব ই কেমন অচেনা, অজানা লাগে। বুঝতে পারে সে পথ হারিয়েছে। এক দিক ধরে সে চলতে শুরু করে, শেয়ালদা স্টেশনের দিকে যাবার জন্য।
--
অনেক্ষন হাঁটার পর ও রাস্তা খুঁজে পায়না। চিন্তা, খিদে আর তেষ্টায় অসুস্থ বোধ করে। রাস্তার ধারে একটা দোকান থেকে একটা গোল পাউরুটি আর এক ভাঁড় চা নিল। একগ্লাস জল চেয়ে খায়। এবার কি করবে চিন্তা করতে করতে মাথা ঝিম ঝিম  করতে থাকে। কোনমতে খাবার টা গলাদ্ধকরণ করে, হতবুদ্ধির মত কিছুক্ষণ বসে থাকল।
--
দোকানের প্রবীণ মালিক তার অবস্থা দেখে বুঝতে পারল সে কোন বিপদে পড়েছে। দিশারী তার সমব্যাথী দৃষ্টি দেখে শেয়ালদা স্টেশন কিভাবে যাবে জিজ্ঞাসা করল। "মা তুমি একদম উল্টো রাস্তায় অনেক দূর চলে এসেছ। তুমি একা যেতে পারবে না। রাস্তার মোড়ে যে পুলিশটা কে দেখছ, ওকে বল ও তোমায় শেয়ালদার বাসে তুলে দেবে। শেয়ালদা এলে কন্ডাক্টার যখন চেঁচাবে, তুমি নেবে যাবে। তোমার কাছে পয়সা আছেতো। দিশারী মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
--
সেই মত দিশারী পুলিশটা কে তার বিপদের কথা জানায় এবং শেয়ালদার বাসে তুলে দিতে অনুরোধ করে। ট্রাফিক পুলিশটি সেখানে কর্তব্যরত সার্জেন্ট কে রিপোর্ট করে। সার্জেন্ট দিশারীকে কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা বড় একটা পুলিশ ভ্যানে উঠতে বলে। দিশারী ভাবে পুলিশ নিশ্চয়ই এই গাড়ীতে তাকে শেয়ালদায় নামিয়ে দেবে। ভ্যানে আরও কিছু মহিলা ও পুরুষ মানুষ বসে ছিল।
--
প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ ভ্যানটি সবাইকে নিয়ে একটি পুলিশ থানায় উপস্থিত হয়, লাইন করে ভেতরে ঢোকায়। দিশারী ভাবে কিছু ভুল হয়েছে বোধহয়। সে একজন পুলিশ কে বলে,"কাকা আমরে  শেয়ালদা স্টেশনে ছেইড়ে দেন, ট্রেনে আমি আমার গ্রামে চইলে যাতি পাইরব।" পুলিশ টি সজোরে ধকম লাগে। পাশ থেকে একটি মেয়ে তার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়। "চুপ করে আমাদের সাথে বসে থাক, না হলে পুলিশ ডান্ডার বাড়ী লাগাবে। তারপর মেয়েদের এক করে নাম জিজ্ঞাস করে তার সথে চেঁচিয়ে বলতে থাকে, "এটা চুরি কেস, এটা রেপ কেস, এটা দেহবেচা কেস, দিশারীর বেলা বলে এটা হারান কেস ইত্যাদি। "
--
তারপর সবাইকে একটা বড় ঘরে ঢুকিয়ে লোহার গেট বন্ধ করে দেয়। কেউ কেউ হাসাহাসি করতে থাকে, কেউ  কাঁদে কেউ নাক ডাকিয়ে ঘুম লাগায়।পুর্বতন মেয়েটি তাকে বলে,"ও তুমি হারিয়ে গেছো, তাই শেয়ালদা স্টেশন যেতে চাইছিলে। কিন্তু পুলিশের সাহায্য নিয়েই ভুল করেছ। ওরা তোমাকে সোজা জেলে নিয়ে যাবে, কারণ ওটাই ওদের কাছে সহজ পথ।" দিশারী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে।
--
পরের দিন সকালে এক টুকরো পাউরুটি আর চা খাইয়ে তাদের ভ্যানে করে শেয়ালদা কোর্টে নিয়ে গেল। সেই রাস্তায় যাবার পথ দিশারীর একান্ত পরিচিত। সে বার বার চেঁচিয়ে বলতে," ওগ আমারে ছেইড়ে দাও, ইখান থেইক্যে আমি আমার কাজের বাড়ী আর আমার গ্রামে দুইখানেই যেইতে পেইরব।" কাকস্য পরিবেদনা। কেউ তার কথায় কর্নপাত ই করল না। কোর্টে জজের কাছে কাউকে তোলা হল না। সন্ধ্যার সময় সবাইকে বাক্সবন্দি করে সোজা প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়া হল।
--
জেল অফিসে সবায়ের নাম, ধাম ইত্যাদি লিখে আপাদমস্তক সার্চ করে মেয়েদের নিয়ে দুই মেয়ে জমাদারনী (ওয়ার্ডার) এক লাঠিধারী জমাদার জেলের মধ্যে দিয়ে আর একটি দেয়াল ঘেরা ছোট জেলের মত জায়গায় গেল। জমাদার বিশাল জোরে হাঁক পারল, "জেনানা ওয়ার্ড " আর একটা ঝোলান দড়ি ধরে টান মারল। সাথে সাথে ঢংঢং করে ঘন্টা বাজতে  লাগল। ভেতর থেকে লোহার গেট খুলে আর এক জমাদারনী গুনে গুনে তাদের ঢুকিয়ে নিল। ভেতরে ঢুকে আর এক পর্ব সার্চ। তারপর বিভিন্ন ওয়ার্ডার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দিনীদের ঢুকিয়ে দিল। দিশারীদের হাজতী নম্বরে ঢুকিয়ে বিশাল তালা ঝুলিয়ে দিল। বন্ধ লোহার গেটের সামনে বসে সারা রাত ধরে দিশারী অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, 'এ কেমন জগৎ যে শুধু মাত্র রাস্তা হারিয়ে যাবার অপরাধে সে আজ জেলে বন্দি। আর যে পুলিশদের কাছে সাহায্য চাইতে গেল তারা সাহায্য তো করলেই না, উল্টে বিনা দোষে তাকে এক অন্ধকূপে বন্ধ করার ব্যবস্থা করল। আর কেউ তার একটা কথাও শুনল না।'
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
( চলবে )











 



















   

















    





 

17 Oct 2016

কলঙ্ক

কলঙ্ক
******
কোজাগরীর চাঁদ দেখতে গেলাম
চারিদিকের নিয়ন আলোর ঝলকানি, 
চাঁদখানি বড়োসড়ো ছিল বটে, কিন্তু হারিয়েছে
তার সেই মিষ্টি মধুর আকাশ ভাসানো আলোখানি, 
কোথায় গেল সেই একঢাল ঝিকিমিকি তারার দল 
এ যেন শুধুমাত্র এক যান্ত্রিক জীবনের ফসল। 
 --
ধোঁয়াশায় মোড়া, পূর্ণিমার আকাশ
অনুপস্থিত গ্রাম গঞ্জের খোলা মাঠে,  
গুমোট ক্যানভাসে লোভের বাতাস
প্রকৃতির স্নিগ্দ্ধতা মুছে বারুদ ফাটে,
কোজাগরীর চাঁদে বিদ্রুপের আভাস 
বিষন্নতা ছুঁয়ে গেছে গঙ্গার ঘাটে। 
--
পূর্ণিমার চাঁদ বলে এতদিন 
দেখেছ আমার কলংক যত,
পৃথিবী ছিল ভাগ্যবতী বহুদিন 
মানুষ নাকি সবচেয়ে উন্নত !
আশীর্বাদের বিনিময়ে উপেক্ষিত প্রকৃতি
মানুষের লোভেই আজ পৃথিবী বিপন্ন, কলঙ্কিত । ____________________________________________________________________________________


















16 Oct 2016

দিশারী - পর্ব 2

দিশারী  - পর্ব ২
************
ধীরে ধীরে দিশারী বড় হয়, ঋতুমতী হয়। ক্রমে সে তার চনমনে ১৬ বছরে পৌঁছায়, তার বিবাহিত বন্ধুদের মুখে নানা রোম্যান্টিক গল্প শোনে। এখন সে তার স্বামীর কথা ভাবতে শুরু করে। নাসির কে নিয়ে নিজের জীবনের নানা রঙিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বড় মধুর লাগে নাসিরের টুকরো টাকরা স্মৃতি। সে নানা ভাবে তার খবর পেতে চেষ্টা করে। ঠিক কোথায় নাসিরের বাড়ী, কি পরিস্থিতি সব খবর সংগ্রহ করে। বাবা মাকে কিছু বলতে লজ্জা পায়। অবশেষে যৌবনের ডাক অগ্রাহ্য করতে না পেরে বাড়ীতে কাউকে না জানিয়ে একাই নাসিরের গ্রামে গিয়ে, তার বাড়ী খুঁজে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। শুধু এক বান্ধবী কে বাড়ীতে খবর দেবার কথা বলে যায়, যাতে বাবা মা চিন্তা না করে।
--
এদিকে নাসিরের বাড়ীতে তার উপস্থিতি এক বিরাট গন্ডগোল বাঁধায়। সারা গ্রামে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। নাসিরের দ্বিতীয়া স্ত্রী উঁচু গলায় চিৎকার করতে থাকে। তার কোলের বাচ্চাটা ভয়ে কাঁদতে থাকে, আর একটি বাচ্চা মায়ের আঁচল চেপে ধরে খাবারের দাবী জানাতে থাকে।প্রতিবেশীরা বাড়ী ঘিরে দাঁড়িয়ে নানা মতামত দিতে থাকে। সদর দরজার ভেতরের একপাশে দিশারী মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, কিন্তু ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় বিনা যুদ্ধে সে মাটি ছাড়বে না। এদিকে নাসিরের মা চিৎকার করে একবার দিশারীর আর একবার প্রতিবেশীদের চোদ্দ পুরুষের শ্রাদ্ধ করছে। কারণ প্রতিবেশীদের বেশ বড় একটা অংশ দিশারীর স্বপক্ষে সওয়াল করতে থাকে। হতবুদ্ধি নাসির দাওয়ায় মাথায় দু হাত দিয়ে বসে থাকে।
--
নাসিরের বড় বোন কামিনী ও তার স্বামী জাকির আসে। তাদের দিশারীকে দেখে খুব মায়া হয়। তারাও তাকে ঘরে তোলার যুক্তি দেয়। অবশেষে গাঁয়ের মাতব্বরের দল সালিশির জন্য আলোচনায় বসে। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়। মাতব্বরের দল বিধান দেয় দিশারীকে বাড়ীতে থাকতে আর খেতে পরতে দিতে হবে। কিন্তু নাসির দ্বিতীয়া স্ত্রীর সাথেই সহবাস করবে। দিশারীর বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে সব জানিয়ে দেওয়া হবে।
--
পরিবারের প্রধান হিসাবে নাসিরের মা সংসারের সব ভারী কাজের দায়িত্ব চাপিযে দেয় দিশারীর কাঁধে। আর ভারী পণ নিয়ে আসা দ্বিতীয়া স্ত্রীর ভাগে হাল্কা কাজের ভার দেয়। কামিনী ও জাকির দিশারীর জন্য একটা সন্মানজনক ব্যবস্থার পক্ষে বৃথাই সওয়াল করে। দিশারীর ভাগ্যে শুধু শ্বশুরঘরে স্থান টুকু জোটে কোনমতে।
--
এই ভাবে দুবছর কাটল। সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে শ্বাশুড়ি ও সতীনের অকথ্য গালিগালাজ আর প্রায় আধপেটা খেয়েও সে মুখ বুজে আর দাঁত কামড়ে পড়ে ছিল। সমস্ত দুঃখের মধ্যে তার একমাত্র সান্তনা ছিল স্বামী। কারণ ইতিমধ্যে নাসির লুকিয়ে চুরিয়ে দিশারীর সঙ্গে সহবাস করতে শুরু করেছিল। যৌবনের ধর্মে স্বামীর আদর সে উপভোগ করত, আনন্দে সাড়া দিত, আর প্রাণ ভরে তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল।
--
তবে ক্রমে নাসিরের ব্যবহার তার কাছে পরস্পর বিরোধী হয়ে উঠতে লাগল। অনেক সময় শ্বাশুড়ি ও সতীনের কথায় তাকে প্রচন্ড গালিগালাজ, এমন কি প্রচন্ড মারধর করতে শুরু করল। অন্যদিকে তার শারীরিক আকর্ষণ শুধু যে উপেক্ষা করতে পারত না তা নয়, লুকিয়ে চুরিয়ে মেঠাইও খাওয়াত। আর ছোট বেলায় তার ঘাড়ে চেপে মেঠাই এর জন্য বায়না করা নিয়ে ঠাট্টা করত। মাঝে মাঝে সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে বাপের বাড়ী ফিরে যাবার পরামর্শ দিত," তুই মোর থেইকে অনেক ছোট।এখন ডাগর ডুগর হহইয়েছিস, বাপের বাড়ী চইলে যা, আবার জোয়ান মরদ বিয়া কর।" উত্তরে দিশারী স্বামীকে আঁকড়ে ধরে, বুকে গুঁজে দিত, "দূর, আমি আর বিয়া কইরতে পাইরবনা।"
--
কামিনী দিদির কাছে সে সব গল্প করত। নিঃসন্তান কামিনী ও জাকির তাকে মেয়ের মত ভালোবাসত। কামিনী তার শুকনো মুখ দেখলেই কাছে বসিয়ে পেট ভরে খাওয়াত। কিন্তু অকস্মাৎ মাথায় বাজ পড়ল। দিশারী সন্তানসম্ভবা হল। আর তাদের গোপন রোমান্স ধরা পরে গেল। স্বাভাবিক কারণে ঈর্ষায় সতীনের তার প্রতি দুর্ব্যবহার মাত্রা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সে অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে, তাই তাকে তুষ্ট করতে নাসির আর তাঁর মা দিশারীর উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করল। কামিনী আর জাকির দিশারীর মা হওয়ার সম্ভাবনায় খুব খুশি ছিল আর যথা সম্ভব তার কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করত।
--
একদিন দুপুরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ক্লান্ত দিশারীকে বিশ্রাম নিতে দেখে নাসির বিদ্রুপ করে," অরে রাইজকন্যা ভর দোপোরে ঘুমের ব্যবস্থা দেখতেছে। যা ওঠ বড়মানষের মেয়া, জমিনে বেগুন চারা লেইগেছি। ওই পোকামারনের ওষুধ (পেস্টিসাইড) ওগুলার পাতার উপর ছড়ায়ে দিবি। আর সারের বোঝা নিয়া যা, গাছের গড়ায় দিবি। উল্টাপাল্টা কইরলে আস্ত রাখবনি, মনে থাকে যেন।"
--
সার আর কীটনাশকের ভারী বোঝা নিয়ে দিশারী কোনো মতে টলতে টলতে বেগুন ক্ষেতে যায়।  চোখে মুখে সে যেন সর্ষেফুল দেখছে। নাসিরের কথা ভুলে গিয়ে সার আর কীটনাশক দুই কোন মতে গাছের উপর ছুড়ে ছুড়ে দিতে থাকে। নাসির তার পেছনে এসে এই কান্ড দেখে সব বোধ হারিয়ে হাতের কাস্তে টা ছুঁড়ে মারে। সেটা গিয়ে দিশারীর ডান হাতর ওপরে পড়ে অনেকখানি কেটে যায়। যন্ত্রয়ায় চিৎকার করে কেঁদে সে মাটিতে বসে পড়ে। বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে তাকে সজোরে এক লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে নাসির বাড়ী ফিরে যায়। অবসন্ন দিশারীর ডান হাত থেকে প্রবল বেগে রক্ত ঝরতে থাকে, তারপর জ্ঞান হারিয়ে বেগুন ক্ষেতে শুয়ে পড়ে।
--
একটু পরে জ্ঞান ফেরে, কিন্তু তলপেটে বীভৎস যন্ত্রনায় সারা শরীর মোচড় খেতে থাকে, দু পায়ের মধ্যে দিয়ে রক্তস্রাবে কাপড় ভিজে যায়। বমি হতে শুরু করে। অনেক্ষন পর কোন মতে উঠে প্রায় হামাগুড়ি দেওয়ার মত করে কামিনীর বাড়ীর দরজায় কাছে পৌঁছে আবার জ্ঞান হারায়। প্রায় সপ্তাহ ভর বাদে তার পুরোপুরি জ্ঞান ফেরে। দেখে কামিনীর খাটে সে শুয়ে, স্বামী স্ত্রী দুজন তার শুশ্রূষায় ব্যস্ত। কামিনীর মুখে নিজের গর্ভপাতের খবর জানতে পারে, নাসির বা তার মা এক বারের জন্যও তার কোন খবর নেয়নি।
--
আরও  কিছু দিন  বাদে তার শরীরে বল আসে, কিন্তু বিবাহিত জীবনের রোমাঞ্চকর অনুভূতিগুলি একেবারে ভোঁতা হয়ে গেছে। কামিনীর পরামর্শে সে জাকিরের সাথে বাপের বাড়ীর পথে পা বাড়ায়। গ্রামে পৌঁছে দিয়ে জাকির ফিরে যায়, দিশারী প্রচন্ড সংকোচে বাড়ী না গিয়ে পুকুর পাড়ে বসে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে। লোকমুখে খবর পেয়ে বাড়ীর সবাই ছুটে আসে। ফকির হারান মানিক ফিরে পেয়ে আত্মহারা হয়ে যায়,"মারে, তুই তোর নিজি স্থানে ফিরে এইসেছিস। তর কুন
দোষ নাই। লাজ কইরবি ক্যানে।"
--
মেয়ের অবস্থা দেখে ফাতেমা আর হামেদা নাসিরদের সকলকে অভসম্পাত করতে থাকে। ফকির বলে,"চুপ যা, ওদের নাম এ ঘরে কেউ বলবিনি। ওর মনে স্থিতি আসুক আর কিছু চাইবিক না কেউ।" শুধু দিশারীর ভায়েরা বলে, "তর চারটা ভাই রয় নাই। ইয়ার জবাব না দিয়া ছাড়বোনি।" "আল্লার কাছে সবার বিচার হবে, কনদিন কি কন ভাল মনিষ্যি  মোর সোনার পিতিমের দাম দিবে না, তাও কি হয় নাকি," বলে ফকির মেয়ের মাথায় হাত বুলায়।
--
দিশারী চুপ করে থাকে। বিয়ের কথা সে আর ভাববে না। তার রাস্তা সে মনে মনে ঠিক করে ফেলে। কদিন সময় লাগবে এই দুঃস্বপ্ম থেকে থেকে পুরোপুরি মুক্তি। তারপর শরীর আর মনের জোর ফিরে পেলে, সে জাকির ভাই কথা মত হাতের কাজ শিখবে। এবার থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে।
 ---

সূর্য্যকে আর একবার প্রদক্ষিন করল পৃথিবী। কিন্তু দিশারীদের অবস্থা আরও খারাপ হল। ফকির জঙ্গলে গাছ থেকে পড়ে  শিরদাঁড়ায় এমন চোট পেল যে তার ভারী কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেল। একটি ছেলে সাপের কামড়ে মারা গেল।বাড়ীর বাকীদের ওপর চাপ বাড়ল। দিশারীকে ও ঘরের কাজের সাথে বাইরে কাজে বার হতে হল, শাকপাতা সংগ্রহ, জ্বালানী জোগাড়, নদীর পাড়ে মাছ ধরার জন্য।  
 --
কিন্তু বিধি বাম। তার পিছনে লাগল গ্রামের জোতদার আরশাদ মোল্লা। ফলে মা বা পিসির সঙ্গ ছাড়া একা বেরোন বন্ধ করতে হল। ইতিমধ্যে দিশারীর কিছু বিয়ের প্রস্তাব আসে। পরিবারের ইচ্ছা থাকলেও দিশারী অনড়। বাড়ীর লোক তাকে বিয়ের জন্য কোন চাপ দেয়নি। আরশাদ মোল্লা তার সুযোগ নিল। নিজের অপরিণত মস্তিস্কসম্পন্ন ছেলের সাথে দিশারীর বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল। তার বদ মতলব আর কারসাজি গ্রামের লোকের বুঝতে বাকী রইল না।
 --
বাপ মেয়ের আসন্ন বিপদের গন্ধে চিন্তিত হয়ে পড়ল। অসহায় ফকির  গ্রামের লোকেদের পরামর্শে তার খালাত বোন
রুবিনা খাতুনের তত্ত্বাবধানে তাকে ঘরের কাজের লোক হিসাবে কাজ করার জন্য কলকাতায় পাঠাতে রাজী হল।"মারে, তুই রুবীনারে তর মা আর খালার মত মান্য কইরবি। আল্লা তরে বিপদে রক্ষা কইরবে। তর ভাল মন্দের বোধের উপর মোদের পুরাপুরি বিশ্বাস রইছে।"
--
 ফাতেমা আর হামেদা চোখে আঁচল দিল। ভারী বুকে দাঁত চেপে ফকির মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাইলেন। ভাইরা রুবিনা আর দিশারীর সাথে ক্যানিং স্টেশন পর্যন্ত গেল, সেখান থেকে তারা কলকাতার ট্রেনে চড়ল। অবশেষে দিশারী তার ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল - তার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নাকি আরও বড় দুর্গতি ভোগ করার জন্য !
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
 (চলবে )






  


































































13 Oct 2016

দিশারী -- মুখবন্ধ, দিশারী - পর্ব ১

দিশারী   --  মুখবন্ধ
**************
দিশারী গল্পের মূল চরিত্রের আসল নাম ছিল হাসিনা। আমার সাথে আলাপ হয়েছিল প্রেসিডেন্সি জেলে।  ১৯৭৪/৭৫ সালে।সেখানেই মীরা, জাহানারা, ছোট্ট শংকর, শ্যামলী ইত্যাদি অজস্র মানুষের, বিশেষত মেয়েদের সাথে আলাপ হয়েছিল। হাসিনা আমার মেয়ে ছিল। মেয়াদী নম্বরের গরাদের ওপারে ছিল হাসিনা, অন্যপারে আমি।  দুজনেই প্রায় সমবয়সী। সুন্দরবনের কোন এক গাঁয়ের মেয়ে হাসিনা, প্রথম সাক্ষাতে দাবী করল আমি ওর মা। আমিও মেনেনিলাম। মেয়ের মতই আবদার ছিল তার। তার থেকে বেশী অন্য কারোর সাথে কথা বললে মুখ ভারী। কারনে অকারণে তার তলব আসতো। আমাদের অন্য কোন বন্ধুকে দেখলে,বলতো," এই দিদি মাকে ডেইকে দে।" বন্ধুটি এসে জানাত,"এই যা তোর মেয়ে ডাকছে। "  
 --
এখানে হাসিনার নাম দিয়েছি দিশারী। তারই মত জেলের অন্ধ কুঠুরি তে বন্দী অসংখ্য মেয়েদের প্রতিচ্ছবি সে। প্রথম কয়েকটি পর্ব তারই মুখে শোনা তারই জীবন কথা। পরবর্তী পর্বে সে হয়ে ওঠে সেই সব মানুষের মুখ, যারা জেলে নিদারুন কষ্ট আর অত্যাচারের এবং অন্যায়ের বিরুধ্বে প্রতিবাদের শরিক।  
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++ ++++

দিশারী - পর্ব ১
***********
"আম্মা দোর টা ঠিক কইরে চেইপে দে। দেখতেছিস না সূর্য্যির আলো ঘরে ঢুকতেছে। রাইতের আঁধার থাইতে, ভোর হওয়ার আগেই খাবারডা খায়ে ফালি, রোজা রাইখবো যে, " ৩/৪ বছরের দিশারী ঘুম ভাঙা চোখ কচলাতে কচলাতে বলল। "ভোর কোন কালে হৈছে, সকলে যখন পান্তা খেইতেছিলো অনেক ডাকাডাকি তে ও উঠিস নাই। এখন কিছু খালে আর রোজা রাখতে পারবি না মা " আমিনা উত্তর দিলো। "তুই দোর টা চেইপে দেলেই আলো এইসতে পাইরবে  না। আঁধারে পান্তাডা খালে ই রোজা রেইখতে পারবো," জেদি গলায় দিশারী ঘোষোনা করে। "অমন বলে না, ফির বচ্ছরে রাইত থাইতে মোদের সাথে পান্তা খেইয়ে নিবি, আর রোজা রাইখতে বাঁধা থাইকবে না।" "না, ফির বছর লয়, ই বছরে রোজা রাইখবো," রীতিমত রেগে গেল মেয়ে। মা জিজ্ঞাসা করে,"পিপাস লাইগলে কি করবি ?" "পুকুরে চান করতে যেয়ে ডুইবে ডুইবে জল খায়ে নিব, কেউ বুইজতে পারবে না। " রেগে মা বলে, "সেয়ান মেয়া।"
--
বাবা ফকির আলী হাসি চেপে এতক্ষন মা মেয়ের বাকবিতন্ডা শুনছিলেন। এবারে হস্তক্ষেপ করলেন," আহা ছেইড়ে দে ক্যানে, ছোট দের কসুর আল্লা মাফ করি দিবেন, উয়াকে রোজা রাইখতে দে।" "দেখছোনি আব্বা কি বলতেছে, তাইতো আব্বারে এত ভাইলোবাসি" আল্লাদী গলায় দিশারী বিজয়ীর হাসি হাসে। " "যা মনে ধরে কইরোগে যাও, বাপের আর পিসির আদরে মেয়ার বারোটা বাজতেছে, মেয়ামানসের এত আল্লাদ উচিত লয়। " মেয়ামানুষ আর বেটাছিলের মইধ্যে কন ফারাক লাই। দুই আল্লার দান, আদরের জিনিস, " ফকির দৃঢ় গলায় উত্তর দেয়। ফকিরের বোন হামেদা উত্তর দেয়, ঠিক কথা বটে, কিন্তুক মেয়ামানুষদের যত দায়। আমারেই দেখ, বনকে মধু আনবার গিয়া বাঘের প্যাটে গেইল মরদ। শ্বশুরঘর আমারে দায়ী কইরে ভিটা ছাড়া কইরলে। দুই ছেলা নিয়া তমাদের এটুক স্থানে এইশতে হইলো।" "ইখানে এইসবে নাত কোথা যাবে, ই তমার বাপের ঘর," আমিনা বলে। ফকির বোন ধমকে বলে, "ই ঘরে তর সমান হক, খপরদার বাজে বকবিনি। তর দুই ছেইলা, মোদের দুই ছেইলা আর,এক বিটি, সব্বে মোদের আসল ধন, আদরের ধন।"
---------

সাত বছর কেটে গেছে। দিশারী এখন সকলের মত সমস্ত নিয়ম মেনে যথাযথ ভাবে রোজা পালন করে। সে এখন বাবার মুখে ছোটবেলায় রোজা রাখা নিয়ে তার ছেলেমানুষীর কথা শুনে লজ্জিত ভাবে হাসে। পাঁচ বছর আগেই কাছাকাছি গ্রামের নাসিরের সাথে তার নিকা হয়ে গেছে। তখন নাসির এলে সে তার ঘাড়ে চেপে মিষ্টি খাওয়ানোর বায়না ধরত। শ্বশুর বাড়ীর লোকেদের সাথে ঠিক হয় সে ঋতুমতী হলে পনের বাকী অংশ নিয়ে শ্বশুরঘরে যাবে।
--
ফকির আলীর ভিটে টুকু ছাড়া আর কোন জমি ছিল না। চাষের সময় হামেদার ছেলেদের নিয়ে জোতদারের জমিতে চাষ করত। বাকী সময় মাছ ধরত, জঙ্গলে কাঠ আর মধু সংগ্রহে যেত। ফতেমা আর হামিদা ধান ভানা, জমিতে বীজ বপন ইত্যাদি কাজ ছাড়াও নদীর পাড়ে মাছ ধরা, শাক তোলা ইত্যাদি কাজে ব্যাস্ত থাকতো।দিশারী  ঘরের সব কাজ ছোট থেকেই করত। শুধু রান্না করার পুরো দায়িত্ব পিসি দিত না, কেবল জোগান দিত। বাকি সময় বান্ধবীদের সাথে গাছে চড়া, সাঁতার কাটা, ছাড়া গল্প করে হেসে খেলে দিন কাটাত।
--
গ্রামের মেয়ে, প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছে সে। নীল আকাশে উড়ন্ত পাখির ঝাঁক, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠে বা নদীর জলে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত , গাছের পাতায় বৃষ্টির জল, ঝোড়ো হাওয়া শব্দ, রাতের আকাশে তারাদের ঝিকিমিকি সব কিছু তার একান্ত আপনার, সবই তাকে ভীষণ ভাবে টানতো। সুখ না থাকলেও শান্তি ছিল পরিবারে। সবার আদরে সহজ সরল জীবনে খুশি ছিল দিশারী।
--
এর মধ্যে একদিন খবর এল নাসির ভাল পণ নিয়ে ১৯/২০ বছরের এক যুবতীকে বিয়ে করেছে। গ্রামের লোকজন ফকির কে পরামর্শ দিল পনের বাকি টাকার কিছু অন্তত দিয়ে দিশারীকে শ্বশুর বাড়ী পাঠিয়ে দিতে। ফকির সোজা সাপটা বলে," আমার মেয়া কে সতীনের ঘর করতে দিব না। " "সময় মত মেয়া কে মোরা ফির বিয়া দিব," হামেদার মত। ফতেমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে," কোথা পাব  টাকা! আর কি হবে মোদের মেয়ার !" গ্রামের লোকেরা সবাই বোঝে, তাদের সকলেই একই পরিস্থিতি। দিশারীর মন কিন্তু খুশিতে উচ্ছল, তাকে নিজের ঘর ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে হবেনা। নাসিরের দ্বিতীয় বার বিয়েতে তার কোন হেল দোল নেই। 
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++









































7 Oct 2016

ইচ্ছা

ইচ্ছা
****

প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে
জীবনের সবচেয়ে অসম্ভব
সুন্দর এক মিষ্টি ইচ্ছা মনকে
আকুল করে প্রতিপলে।
নতুন করে মা হবার স্বপ্ন
দেখি বার বার, প্রতিবার।
 --
নতুন করে নিজের জঠরে
নিয়ত আস্বাদ পেতে চাই  
নতুন প্রাণের স্পন্দন ,
ক্ষুদে হাত পায়ের সঞ্চালন
অনুভব করি সেই সুতীব্র গর্ভ যন্ত্রনা ,
তার সাথে নতুন অতিথির আগমন।
--
নতুন সে অতিথির
বাসযোগ্য ভূমির জন্ম দিতে পারেনি
তাদের অভাগা মা বাপ। 
তারাই যেন তা গড়ে নিতে পারে, 
আনতে পারে শান্তি, স্বাধীনতা, সাম্য
সাধারণ মানুষের সেই চিরন্তন  কাম্য।
-------------------------------------------








  

1 Oct 2016

যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা


 যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
************

আয় আমারা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি
তলায় তলায় হাত মেলামেলি
টেবিলের ওপর যত ঘুষোঘুষি
চল আজ আমরা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি।
--
গ্রামের হাটে চলেছে বিকিকিনি   
গাছে গেছে লাফিয়ে বেড়ায় শিশু দস্যুবাহিনী
পুকুরে তোলপাড় ঝাঁকবাঁধা তরুণী
মাঠে মাঠে ফসল বুনে চলে কিষাণ কিষাণী।
--
কিছু বোমা ফেল তুই, আমি ফেলি কিছু
আরো কত আসবে মোদের পিছু পিছু 
রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে কত সহস্র শিশু 
তাতে তোর বা আমার আসে যায় না কিছু। 
--
 বোকা তোরা, একে অপরে মারামারি কর
 পেছনে আমি আছি নিয়ে অস্ত্রের সম্ভার,   
 কত যুদ্ধ বিমান আর জাহাজ লাগবে তোদের!
 হবেনা অভাব, আমার ঘর কুবেরের ভান্ডার।
--
ওরে মূর্খ, অর্বাচীনের দল,
আমার চাই তো শুধু বাজার দখল
নিজেদের মাঝে লড়াই করে মর
আগমনী আনে আনুক তোদের অমঙ্গল।
--
অতি সাধারণ মানুষ মোরা এখনও ভুলিনি 
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মাশুল আজও দিয়ে চলেছি -
আউসচয়ুইজ, হিরোশিমা আর নাগাসাকি,
মানবপ্রেমিকরা যুদ্ধ বন্ধের আওয়াজ তুলেছি।
--
ভোল্গা, তাতু, মেকং শিখিয়েছে, তোরা শুধুই কাগুজে বাঘ
একদিন দুনিয়া জুড়ে সফল হবেই শেকল ভাঙার ডাক।  
 
************************************************************************************