7 Jul 2018

মেয়ের ছাতা

মেয়ের ছাতা
*********

সেই ছোট্টবেলা থেকে শুনেছি, 'ভারি তো মেয়ের ছাতা!' প্রয়োজন কি এত চিন্তার, পড়ছে পড়ুক নিজের মত। তবে বিজ্ঞান পড়ার দরকার নেই, মিছামিছি কেন বাড়তি ব্যয় ! নেহাত অসুবিধা না হলে কলা বিভাগে দুটো একটা পাশ যদি করে তো কারুক, বিয়ের বাজারে দরে সুবিধা হবে !
--
সাঁতার শেখানো নিষ্প্রয়োজন, জলে ডুববে মরবে না, মেয়ের ছাতার মরণ নেই ! শুধু শুধু গানবাজনা শেখার কি প্রয়োজন, রান্নাঘরে হাঁড়ি ঠ্যালাই তো ভবিষ্যৎ, বরং মা ঠাকুমার হাতে হাতে কাজ করুক। শিখে যাবে রান্নাবান্না আর বাকি সব কাজ, শ্বশুর  বাড়ীতে কথা শুনতে হবেনা !
--
মাঠে ঘাটে দৌড়ঝাঁপ করে কাজ নেই , বারকুটে মন হয়ে যাবে, ম্যাও ধরবে কে ! দুদিন বই তো নয়, ছেলে মানুষ করতে হবে যে!  দুচারটে রান্নাবাটি আর পুতুল বরং কিনে দাও, ভবিষ্যতেকি করতে হবে বুঝে যাবে ছোটবেলাতেই ! খামোখা অন্য কোন স্বপ্নের জাল বুনবে না।
--
ছেলেরাই তো আসল বংশের প্রদীপ। তাই সকল সুবিধা তাদের ভাগ্যে বরাদ্দ। তাদের যে বৈজ্ঞানিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিছু একটা হতে হবে। ঘটিবাটি বিকিয়ে গেলেও তাদের জন্যে সব সুযোগ অবশ্যই দেওয়া চাই। তাদের মঙ্গলের খাতিরে অন্নপ্রাশন,ভাইফোঁটা, রাখী বন্ধন, পৈতে, জামাইষষ্ঠী করতেই হবে। তারা যে বংশে বাতি দেবে। বেঁচে থাকতে বাবা মা কে দেখুক না দেখুক মরলে শ্রাদ্ধের অধিকার তো ছেলেদের। বংশ রক্ষার কৃতিত্ব নাকি পুরুষদের। সমাজে রাজ তাই করবে পুরুষ।
--
তাই অভিভাকের অধীনে মেয়েদের সারা জীবন কাটাটাই স্বাভাবিক। প্রথমে বাবা বা ভাই স্থানীয় কেউ, পরে স্বামী বা ছেলে। না হলেই অনর্থ। বিয়েতে পাত্রীপক্ষের কাছে পণ দাবী করা তো রেওয়াজ! সেই সাথে শ্বশুরবাড়িতে নিত্য বধূ হত্যা চলেছে অক্লেশে! কেউ কেউ আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে মেয়েজাতিকে বারোয়ারী সম্পত্তি মনে করে, তাই সুযোগ পেলেই  শ্লীলতা হানি ধর্ষণ, এমন কি হত্যা ও!
--
শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ বাদ যায় না! অজুহাত তো আছে - চলন বলন বা পোশাক আশাক ঠিক  নেই , রাত বিরেতে বার হয়, হোটেল রেস্তোয়ায় যায়। নয়তো বিবাহিত এঁয়োতির চিন্হ নেই, বৈধব্যের কোন লক্ষণ নেই ইত্যাদি, ইত্যাদি কত কিছু। ছোট ছেলেরা এমনকি বয়স্ক পুরুষ মানুষ তো আকর্ষিত হতেই পারে! তাদের দোষ কোথায় ! সব দোষ মেয়েদের, এমনকি তিন মাসের শিশুরও। সভ্য মানুষের সমাজে ঘটেই চলেছে !    
--
এত সত্ত্বেও আজ এই 'মেয়ের ছাতার' দল স্বপ্ন দেখে। মনে তাদের কল্পনার জোনাক জ্বলে। তাইতো আজ তারা স্থলে, জলে, অন্তরীক্ষে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মেয়েরা হল আকাশের জোৎস্না ভেজা তারকারাজি, অতল সমুদ্রের ঝিনুকের মুক্তা, পায়ের তলার শক্ত মৃত্তিকা। সৃষ্টির ধারক, বাহক, ও আলোকবর্তিকা।
--
পৃথিবীতে জন্ম নিক উল্কা পিন্ডের মত অগণিত কন্যা সন্তান। সনাতন বস্তাপচা সমস্ত মিথ কে জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেদের মর্যাদা ছিনিয়ে নিক। পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের পাঁজর ভাঙতে ভাঙতে তারা এগিয়ে যাক। অচিরে রচনা করুক মুক্তির এক  মহাকাব্য। সব ক্লেদ মুছে দিয়ে অগণিত চন্দ্রমল্লিকার সুন্দর বাগান রচনা করুক মাটির এই পৃথিবীতে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------