30 Jun 2015

জাহানারা

জাহানারা
*******

জেল হাসপাতালের এক কোনে পড়ে থাকতো জাহানারা। বয়েস দশ / এগারো।  ছোটখাটো শীর্ণ শরীরের সাথে বেডপ পেটটা একেবারে বেমানান। নির্বাক, ভাবলেশ হীন ভাবে বসে থাকে। কেউ কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে শুধু বিহ্বল, ভাবলেশহীন চোখদুটি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। কখনো কখনো সেখানে একটা তীব্র আতঙ্ক আর বিতৃষ্ণা ঝিলিক দিয়ে যায়  - কিন্তু মুখে কোন কথা নেই।

---

কী ভয়ঙ্কর অপরাধ করে ও জেলে এসেছে! কোন মারাত্মক অন্যায়ের ভারে এই ছোট্ট মেয়েটা এমন মূকবধির! ক্ষিদে, তৃষ্ণা, ঘুম কোন প্রয়োজন ই কি ওর আর  নেই ! বেশীর ভাগ সময় উপুড় হয়ে পড়ে থাকে। ঘুমায় কিনা বোঝা ভার। দয়া করে কোন সহবন্দিনী ওর প্রাপ্য খাবার টুকু এনে দিলে, হাতে নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। কান্না নেই, হাসি নেই, কথা নেই  - ও যেন নিজেই নেই জগতের মানুষ। মাঝেমধ্যে শুধু অভিব্যক্তি হীন চোখ মেলে গরাদের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। পেটটা ওর বড় হতে থাকে দিনের পর দিন। মাস কয়েক পর বোঝা গেল জাহানারা গর্ভবতী।

---

একদিন মাঝ রাতে সে একটি শিশুর জন্ম দিল। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতার প্রতিমূর্তিতে কোন সাড়া জাগলোনা। নবজাতক ক্ষিদেতে চিত্কার করে। সারা হাসপাতাল বিব্রত বোধ করে, শুধু জাহানারার কোন হেলদোল নেই। মেট্রন / ওয়ার্ডার রা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে। মাঝেমধ্যে দু / চার ঘা বসিয়েও দেয় - "দে। তাড়াতাড়ি বাচ্চাকে দুধ দে, নইলে মেরেই ফেলবো তোকে। সারা জেলহাসপাতাল মাথায় করে রেখেছে, যত সব বেজন্মার দল।" দু / চার ঘা লাঠির বাড়ি বা অকথ্য গালাগালি , কিছুতেই বিকার নেই। জীবনের প্রতি কোন মায়া নেই, নেই আকর্ষণ - না বাচ্চার প্রতি কোন টান, না নিজের প্রতি কোন খেয়াল - কিছুই নেই, যেন প্রাণহীন একটা জড় পদার্থ।

---

কদিন পরে জাহানারার বাবা - মা এলেন অসুস্হ মেয়ের সাথে দেখা করতে। বাবা এক ছোটখাটো বিস্কুট কারখানার শ্রমিক, মা লোকের বাড়ীতে বাড়ীতে বাসন মাজা, কাপড় কাঁচা ইত্যাদি কাজ করে বেড়ান। তাদের স্বল্প আয়ের মধ্যেই সাধ্যমত জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। জাহানারা সেসবের দিকে চোখ তুলেও দেখলো না। মা স্নেহভরে গায়ে  হাত বুলাতে লাগলেন। বাবা মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে স্নেহভরে কত কথা বলার চেষ্টা করলেন। মেয়ে নিশ্চুপ, উপুড় হয়ে মুখ গোঁজ করে শুয়ে থাকলো।

---

শেষমেষ মা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বিব্রত বাবা শোনালেন মেয়ের অপরাধের কাহিনী। অভাবের সংসারে মেয়েকে কোন এক উচবিত্ত পরিবারে কাজে লাগিয়ে ছিলেন, অন্তত পক্ষে পেট ভরে দুটো খেয়ে বেঁচে থাকবে এই আশায়।প্রথম কটা মাস ঠিকঠাক চলছিল। একদিন বাবুর বাড়ীর  নববিবাহিত ছেলে-বউ  সন্ধ্যাবেলায় সিনেমা দেখতে গেল। বাড়ীতে রইলেন তাদের বাবা, বাড়ীর মালিক। বয়স ষাট / বাষট্টি হবে, শক্তপোক্ত চেহারা , রাশভারী মানুষ। ফাই ফরমাস খাটার জন্য রইল জাহানারা। ঠিকে রাঁধুনি রান্নাবান্না সেরে বাড়ী চলে গেল। বড়বাবু রাতের খাবার খেয়ে শুতে  যাবার সময়ে জাহানারা কে এক জগ খাবার জল শোবার ঘরে পৌঁছে দিতে আদেশ করে গেলেন।

---

জাহানারা জল নিয়ে ঘরে গেল। "শোন, জলটা টেবিলে রেখে আমার মাথাটা ভাল করে ম্যাসাজ করে দে। মাথাটা খুব ব্যাথা করছে।  তাছাড়া তোর তো এখন কোন কাজ নেই। আয় এইখানে আমার বিছানার পাশে বস " - আদেশ দিয়ে বিছানায় শুলেন তিনি।  ছোট্ট মেয়েটা ছোট ছোট হাত দিয়ে বড় বাবুর মাথা টিপতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই  প্রবীন মানুষটির মধ্যে পশুবৃত্তি জেগে ওঠে, জাহানারা কে দুহাতে বিছানায় টেনে নেয়। মেয়েটি তখন সবে মাত্র শৈশব থেকে কৈশরে পা রাখতে চলেছে। একেবারে সরল সহজ মেয়ে, জীবনের অনেক কিছু তার অজানা। তবু তার মনের মধ্যে একটা দারুন ভীতির সঞ্চার হল। বার বার তাকে ছেড়ে দেবার জন্যে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাবু তখন ভয়ংকর আর বেপরোয়া - ভাল করে কোন কিছু বোঝার আগেই সর্বনাশ হয়ে গেল জাহানারার।

----

প্রচন্ড হিংস্রতার সাথে ধর্ষিত মেয়েটি  জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে। এদিকে সিনেমা থেকে ফিরে ছেলে - বউ সব বুঝতে  পেরে তড়িঘড়ি গাড়ী করে জাহানারাকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে যায়, বলে হটাত অসুস্হ হয়ে পড়েছে। পাড়ার ডাক্তার আসার পর সব খোলসা হয়ে যায়। বস্তিবাসীরা দল বেঁধে থানায় নালিশ জানায় পুলিশ এসে জাহানারাকে ভিক্টিম হিসাবে থানায় নিয়ে যায়। বাড়ীর লোকজন কে কদিন পরে শেয়ালদা কোর্টে হাজিরা দিতে বলে যায়। থানায় অসুস্থ মেয়েটির উপর চলে নানা পরীক্ষা - নিরীক্ষা, জিজ্ঞাসাবাদ, সেই  সঙ্গে নানা কদর্য্ রসিকতা।

---

সুবিচারের আশায় জাহানারার বাবা - মা কয়েক জন বস্তিবাসীকে নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে  সকল দশটা থেকে শেয়ালদা  কোর্টে অপেক্ষা করতে থাকে। সারা দিন তারা পুলিশ, কোর্টবাবু, উকিল ইত্যাদি সবার কাছে চরকির মত পাক খান , কিন্তু কি হচ্ছে, কি হবে কিছুই তাঁদের বোধগম্য হয়না। শুধু বুঝলেন সরকার বাহাদুর জাহানার জন্য সরকারি উকিলের ব্যবস্থা করবেন, যেহেতু পয়সা খরচ করে উকিল রাখার ক্ষমতা তাদের নিজেদের নেই।

---

সারা দিন খাওয়া দাওয়া নেই,  শেয়ালদা কোর্টে  বসে রইলেন তাঁরা। বিকালের দিকে তাঁরা দেখলেন তাঁদের নাবালক ধর্ষিতা কন্যা কে পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। আর ধর্ষক বড়বাবু বুক ফুলিয়ে ছেলের সাথে কোর্টের গেট দিয়ে বেরিয়ে নিজেদের গাড়ীতে উঠছে। জাহানারার বাবারা দৌড়ে গিয়ে থানার ওসিকে জিজ্ঞাস করলেন, "একি রকম বিচার হলো পুলিসবাবু। আমাদের নির্দোষ নিস্পাপ মেয়েকে তোমরা ধরে নিয়ে কোথায় চলেছো ! আর ওই দিকে অপরাধী যে দিব্ব্যি ছাড়া পেয়ে গাড়ী চড়ে নিজের বাড়ী চলে গেল ?"
---

ওসি উত্তরে বললেন, - "আরে ব্যাটা মুর্খের দল, যতোক্ষণ না প্রমান হচ্ছে উনি দোষী, ততক্ষণ জামিনে ছাড়া থাকবেন । আর তোদের মেয়ের যাতে কেউ কোন ক্ষতি না করতে পারে, তাই ওকে জেলে সরকারি হেপাজতে, মানে হলো গিয়ে রেপ কেসের ভিক্টিম হিসাবে প্রেসিডেন্সি জেলে সেফ কাস্টডিতে  রাখা হবে " জাহানারার বাবা-মা হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন, "বাবু আর  কি ক্ষতি ওর হবে, বরং বাড়ী নিয়ে গেলে আমাদের কাছে আদরে থাকবে। তোমরা তো সব জানো। ওই লোকটাকে ধরে রাখো না কেন !" "যা যা, আমাদের উপদেশ দিস না, আইনের বুঝিস কিছু ? বিরক্ত করিসনা। " "একজন বস্তি বাসী উত্তর দেয় ," না বাবু, যে আইন দোষী কে ছেড়ে দিয়ে, নির্দোষী কে জেলে রাখে, সে আইন বুঝা মোদের কম্ম নয়। "

---

এতক্ষন সবাই জাহানারা বৃত্তান্ত শুনছিলো। হটাত করে ডুকরে কেঁদে ওঠে মীরা, কোলে তার হার জিরজিরে একটা বাচ্চা লেপ্টে আছে। জাহানার বাবা অবাক হয়ে তাকান। শান্তিবাই বলে ," ওর একই কেস , গত দুবছর ধরে এখানেই আছে। আর ও কত যে এরকম কেস আছে, তোমরা ধারণা করতে পারবে না। এই দেখোনা, আমাকে গাঁয়ের মোড়লের ছেলে ভালবাসার ভান করে সর্বনাশ করেছে। দিন গুনছি চাচা, যেদিন ছাড়া পাবো, শয়তান টার মজা দেখাবো।"

---

জাহানারার বাবা বুঝতে পারেন সুবিচারের প্রত্যাশায় অনেক  ভিক্টিম জেলের সেফ কাস্টডি পচছে। তবু আশা মরেও মরে না। যাবার সময় মেয়ের হাতদুটি ধরে অনেক বোঝালেন, "বাচ্চা টাকে দুধ খাওয়া মা। উকিল বলেছে এই বাচ্চাটা বেঁচে থাকলে, ওর রক্তের সাথে শয়তান টার রক্ত মিললে , দোষী প্রমান করা যাবে ,আর শাস্তি হবে। " মেয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকলো, আর তার জন্য আনা জিনিস পত্র পড়ে রইলো অবহেলায়।

---

জাহানারার বাবা মা যাবার সাথে সাথে লোভী ওয়ার্ডার আর তাদের দালাল কয়েদীদের মধ্যে তার বাড়ী থেকে আনা জিনিসপত্র ভাগাভাগি হয়ে গেল। কিন্তু সে একই ভঙ্গীতে মুখ গুঁজে পড়ে রইলো। তারপর আরো দুদিন কাটলো। সে বাচ্চাটাকে ছুঁয়েও দেখলো না। ভাল সহ বন্দিনীদের কেউ কেউ নিজের বুকের দুধ দিয়ে, বা হাসপাতালের থেকে একটু  আধটু দুধ জোগাড় করে খাওয়ালো , কিন্তু বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না।
---

আবার এলেন জাহানারার মা - বাবা। তাঁরা আসতেই মেট্রন ঝাঁঝিয়ে উঠলো, " তোমাদের  মেয়ে দুধ না খাইয়ে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলেছে।" বাবা কপাল চাপড়ালেন." হায়, হায়, তুই কি করলি মা!ওটা বেঁচে থাকলে যে শয়তানটার শাস্তি হত।"    এত দিন বাদে চোখ তুলে তাকাল জাহানারা , কোন বিহ্ভলতা নেই সেই চোখে। আছে শুধু একটা পরিণত মানুষের আত্মবিশ্বাস, যা সঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘ দশ মাসের  জেল জীবনের অস্বাভিক নরক যন্ত্রনা , কদিনের পুলিশ চৌকিতে পশুখামারের অপরিসীম ক্রুরতা আর দাদুর বয়সী একটা মানুষের আমানবিক পাশবিক হিংস্রতার অভিজ্ঞতার  আলোকে।
---
এক টুকরো বিদ্রূপ মাখা হাসিতে তার ঠোঁটের কোন দুটো একটু বেঁকে গেল। যেন বলতে চাইল, " আইন কি গরীব মানুষদের জন্যে ! আর দোষীকে শাস্তি দেওয়া কি এতই  সোজা সরল ব্যাপার ! তাহলে আমার মত এতগুলি মেয়ে এখানে পড়ে আছে কেন ! অনেক হয়েছে , এবারে আমাকে বাড়ী নিয়ে চলো। এই নরক থেকে আমি মুক্তি চাই। "
_________________________________________________________________________________________
সত্যঘটনা অবলম্বনে। ' সিনি - আশা' র ' ভাবনা ' সংকলনে, ১৯৯৫ সালে প্রথম প্রকাশিত।    


____________________________________________________________________________________________




































































27 Jun 2015

নারী

নারী
****

শৈশবে তুমি ফুলের র্কুঁড়ি,
কৈশোরে কচি কলাপাতা,
যৌবনে সাগরের নীল ঢেউ,
প্রৌঢ়ত্বে মাঘের শেষে বৃষ্টি ,
বার্ধ্বক্যে শ্বেতশুভ্র মেঘ।
---------

তুমি উর্ব্বরা চষা জমি,
পৃথিবীর আর্ধ্বেক আকাশ,
দোষগুনে মেশা একটা
আস্ত সজীব মানুষ,
এটাই তোমার পরিচয়। 
 ________________

26 Jun 2015

সময় - 2

সময় 
****

এ বড় অন্ধকার, অনিশ্চিত ,অস্থির একটা দিন  ,
অদ্ভূত নিঝুম  নিঃস্তেজ, নির্মম সময়।   
তখন  ঘড়িতে রাত মাত্র দশ কি সাড়ে দশ ,
বৃষ্টি  ভেজা রাত, পথ ঘাট সুনসান।
রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর গুলোও বেপাত্তা ,
পথে নেই  শুয়ে থাকা ঘরহীন রাস্তার বাসিন্দারা ।
---

অসংখ্য শূন্য  রাস্তা  ঠিক যেন কতগুলি অজগর সাপ ,
নয় ঠিক রাস্তা, নয় কোন সাপ, যেন অসংখ্য লাশ।
অগনিত অচেনা লাশ, সার সার পড়ে আছে,
স্তব্ধ বাতাস, নিরুত্তাপ পৃথিবী, নির্দয় আকাশ।
অনুভূতিগুলো বিপর্যস্ত,অভিব্যক্তি এলোমেলো ,
এক সুকঠিন লড়াইয়ের মোকাবিলার দিন আজ।

 ---

এই মহাকাশে এই মহা  বিশ্বব্রম্ভান্ডে অবিরাম যে ঘূর্ণন
পৃথিবী নামক গোলোক টি তো তারই একটি অঙ্গ মাত্র।
অন্য কোথাও, অন্য কোন খানেও কি
এই একই  অন্ধকার , বোবা হাহাকার !
নাকি অগণিত গোলকের ন একখানে 
আছে অন্য নূতন কোন জীবনের রসায়ন  ! 
--

যেখানে রাস্তাগুলিকে লাশ মনে হয় না
ছোট্ট  কুকুর ছানা গুলি খুনসুটি করে ,
মিষ্টি নরম গোধূলির আলোয় হাসে দিগন্ত ,
বাতাস ঢেউ খেলে যায় ঘাসের উপর দিয়ে
মানুষের জীবন বৃত্তান্ত যেখানে মুখরিত হয়
বনানীতে, আকাশে , বাতাসে,  ধরাতলে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------





25 Jun 2015

সাধনা

সাধনা
*****

অবয়বের ব্যবচ্ছেদে ব্যস্ত সময়
নেই প্রানের শীতল পরশ ,
অজ্ঞান অদক্ষ মন  ,
হৃদস্পন্দন অনুভবের অন্তরায়।
---

এখন ও যে শিশুর টলমল পদক্ষেপ,
কবে আসবে কৈশোরের উন্মুক্ত কলোরব,
যৌবনের দামাল উন্মত্ত দাপাদাপি ,
পরিণত  অনুভূতির মগ্নতা !
---

হাসিকান্নার জোয়ার ভাঁটা ,
নৈসর্গিক  বিচরণ,
সমাহিত আত্মস্থতা,
বিশ্বব্রম্ভান্ডের সাথে একাত্মতা।  
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বাতুলতা

বাতুলতা
******

অসার মনের তির্যক কথা
জ্বালা ধরায় মনে ,
আঘাত হানে অন্তরে -
ব্যাঙেও আজ লাথি মারতে চাওয়ার
সাহস পায় কোথা !
শুনে ছেলেটা বললে -
ব্যাঙেরাই তো
লাথি মারতে চায় ,
হাতিরা জানে
তাদের পায়ের ওজন  কত ,
সত্যি !
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

22 Jun 2015

মেঘ

মেঘ
***

উন্মুক্ত বিশাল আকাশ তান ধরেছে মেঘ রাগে ,
মেঘ বালিকারা কালো, ধূসর, ঘন নীল্ নানা রঙে,
দৌড়ে বেড়াচ্ছে সারা আকাশটা তোলপাড় করে।
---

সূর্য্য, চাঁদ,আর  তারার  দল  
চাপা পড়ে  গেছে  দূর্ভেদ্য মেঘের পাহাড়ে ,
মেঘরাজ রাজত্ব করছে দাঁপিয়ে।
---

পেখম তুলে ময়ূর নাচে মেঘের ডাকের তালে তালে।
বাতাসে মেঘের গুঞ্জন ,
গাছগাছালি তে লেগেছে মেঘের রঙ ,  
---

দিঘীর জলে বাচ্চা মেঘেদের মিষ্টি মধুর খেলা ,
মাটিতে মেঘের গন্ধ ,
সমুদ্রে উন্মত্ত মেঘের উত্তাল তরঙ্গ।
---

মেঘের প্রেমে মজে প্রকৃতি আলাপ ধরে দেশ রাগে।
মেঘ গর্জনে দুলছে পৃথিবটা ,
মানুষের হৃদয় তন্ত্রীতে মেঘের ঘনঘটা।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



20 Jun 2015

মানুষ সাধারণ

মানুষ সাধারন
**********

আমরা তো নই কেউ নরকের কীট ,
অথবা স্বর্গের দেবদেবী ,
অতি সামান্য মর্ত্যের জীব,
মানুষ সাধারন।
ভাল মন্দে মিশে থাকা
মানুষ সাধারন।
---

তবু তারই মাঝে আছে
কিছু হের ফের ,
কেউ দুর্বল, কেউ দৃঢ় মন
কিছু সরল অথবা জটিল,
কেউ নির্লোভ, কারো লোভী মন ,
অতি সামান্য মানুষ সাধারন।
---

দাতা আর গ্রহীতা ,
দাম্ভিক বা বিনয়ী ,
এই সবই আছে আমাদের মাঝে
কম বা বেশী সব মেশামেশি
সব কিছু মিলে মানুষের মন ,
অতি সামান্য মানুষ সাধারন।
___________________________________________________________________________________












15 Jun 2015

বৃষ্টি ভেজা বিকাল

বৃষ্টি ভেজা বিকাল
*************
বৃষ্টি ভেজা টলটলে বিকাল
ছিমছাম পথ ঘাট।
চারা গাছে জলসিক্ত  ফুলপাতা
ছেড়া ছেড়া মেঘের মধ্যে
স্বচ্ছ নীল আকাশে নরম আলো ,
হওয়ায়  মধুর আমেজ ,
বুড়ো গাছেদের কোটরে পাখীর কূজন ,
ঝরঝরে মনমেজাজ ,
চারদিকে শিশুদের মিঠে কাকলী
নেই দমবন্ধ গুমঠ।
-----------------------------------

11 Jun 2015

বৃষ্টির ছড়া

বৃষ্টির ছড়া
*******

অবশেষে বৃষ্টি এলো ঝাঁপিয়ে
দুরন্ত বাতাসে হেসে খেলে ,
আঁধার ছেয়ে চারি ধারে,
শুষ্ক মাটি সিক্ত করে,
দগ্ধ জীবন শীতল করে
বৃষ্টি এলো ঝাঁপিয়়ে। 

---

মেঘ ডাকে গুড়গুড়িয়ে,
সোঁদা সোঁদা গন্ধ ছড়িয়ে ,
মনের মাটি  ভিজিযে,
বিশ্বভুবন  দাঁপিয়ে,
আকাশটাকে কাঁপিয়ে
বৃষ্টি এলো  ঝাঁপিয়়ে। 
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



10 Jun 2015

জগজীবন পুর - প্রত্নতত্বের একটি কোলাজ

জগজীবন পুর - প্রত্নতত্বের একটি কোলাজ
**************************************************

১) জগজীবন পুর

***************


জগজীবন , মালদার প্রত্যন্ত এক খানি গ্রাম ,

আজ একটি নাম , প্রত্নতত্ত্বের অবাক বিস্ময়।

জেগেছে সহস্র বত্সরের পুরাতন ইতিহাস

তার প্রাচীন ইমারথ, মাটির ভাঙ্গা পাত্র, মূর্তি,

সিলমোহর আর কত শত প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে ,

আদিম সভ্যতার রূপ, রঙ, রস আর গন্ধ বহে ।

অতীত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বর্তমানের আঙিনায়।

প্রশস্ত করেছে ভবিষ্যতের পথ এক মিলিত কলতানে।
_______________________________




২) জগদীশের হাতপাখা

******************


জগদীশের দেওয়া হাতপাখা টা

বিচিত্র রঙের সুতোয় বোনা।

মনের সবটুকু রঙ নিংড়ে

আন্তরিকতায় ভরপুর।

---


অতি সাধারণ মানুষ জগদীশ

তার অসাধারণ ভালবাসার ডালি নিয়ে,

মানবিক মহিমায়

জ্বলজ্বল করছে।

---


তার নাড়ির টান

জগজীবন পুরের মাটিতে ,

প্রাচীন ইতিহাস প্রস্ফূটিত

তারই লাঙ্গলের ফলায়।

----


অতীত ইতিহাসের পুনঃ জাগরুক

বর্ত্তমান কর্মজযজ্ঞের হোতা

এদেশের উত্খাত কৃষক জনতা

নিজজমিতে আজ অস্থায়ী মজদুর ।
______________________




৩) দুলাল
*********


জগজীবন পুরের দুলাল

সহজ, সরল, স্নেহের প্রতিমূর্তি,

উত্পাটিত পিতৃপুরুষের ভিটে থেকে

একজন সাধারণ অস্থায়ী মজদুর।

প্রাচীন ইতিহাসকে খুঁড়ে

তোলার কর্মকান্ডে আছে

তাঁর বিশিষ্ট এক ভূমিকা।

---


বিগত দিনের ঘুমভাঙানোর প্রচেষ্টায় নিমগ্ন

তৃষ্ণার্ত ক্ষুধাতুর কর্মীদল ক্যাম্পে ফেরে,

নিবৃত্তির উপকরণ নিয়ে হাজির দুলাল,

ভালবাসা তাঁর মূর্ত হয়ে ওঠে

গরম ভাতের থালায় ,

দরদী মনের নীরব আন্তরিকতা

ঠান্ডা জলের গ্লাসে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



6 Jun 2015

বৃষ্টির আশায়

বৃষ্টির আশায়
*********

দিগন্তজোড়া ধূসর মেঘের আবরণ
ভেঙে একফালি আলোর কিরণ,
ভাপেসেদ্ধ জীবনের ঘর্মাক্ত কলেবর
শীতল বাতাসের নরম ছোঁয়া পেতে কাতর ,
বিবর্ণ গাছেরা  জলের আশায় চাতক পাখীর মত
আকাশ পানে বাড়িয়ে দিয়েছে দুটি হাত ,
ময়ুরেরা গুমগুম মেঘের ডাকে
পেখম তুলে, নাচের নেশায় চেয়ে থাকে।
চষা জমির ঠোঁটদুটি  ফাঁক তৃষ্ণা মেটাবে বলে 
কচি ধানের চারা সবুজ হাসি হাসবে মেঘভাঙা জলে,
ফুটিফাটা ধরণী বৃষ্টিতে স্নান করে রমণীয় হবে
সোদামাটির গন্ধে বিশ্বভুবন মাতিয়ে দেবে।
-------------------------------------------

5 Jun 2015

অনুভুতি -- (1) &(2)


 অনুভূতি
 *******
(১)
দমফাটানো গরমের  দাপটে,
ম্রিয়মান প্রকৃতি ,
জীবন যেন ধুকছে ,
তারই সাথে পাল্লা দিয়ে
মনের গতিও  মৃতপ্রায়।
-----------------

 (২)
ক্ষুদ্র চাওয়া পাওয়ায় 
হৃদয় হয় মলিন,
সৃষ্টির আনন্দমাখা যন্ত্রণা
ভীরু মনকে
করে তোলে সবুজ। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

3 Jun 2015

লুটেরাদের ভবিতব্য

লুঠেরাদের  ভবিতব্য
**************

সারা দুনিয়া টা লুঠে পুটে
খাচ্ছিস তোরা ,খা
তোরা তো আমার দূর্গা কে
মোটেই চিনিস না, 
তোদের ভবিতব্য তোরা
নিজেরা  জানিস না।
 ---

লোভ লালসার ভোগের মাশুল
দেবার  দিন আজ  আগত
তৃতীয় বিশ্বের গোকূলে বাড়ছে
দূর্গারা অগনিত।
তোদের নিধনে দিতে প্রাণ 
তারা নয় মোটে কুন্ঠিত।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

আশ্রয়

আশ্রয়
*****

এ যেন ধূসর মরুভূমির মাঝে
এক বিশাল বটগাছ ,
তারই ছায়ায় লালিত
কটি অসহায় কচি গাছ ।
---

বিভত্স মরুঝড়ে উপড়ে পড়েছে
ছায়া শীতল আদিম বটগাছ ,
নীচে উত্তপ্ত বালুরাশি, ধ্বসে গেছে 
শিশু গাছেদের  মাথার ছাদ।
---

উপরে ঝলসানো সূর্য্য
অথবা ঝঞ্ঝামুখর নিকষ কালো রাত ,
দিশেহারা মন, বিধ্হ্স্ত জীবন
যুঝতে হবে একাই অকস্মাৎ ।
---

অন্ধকার যুগ, রিক্ত চারিধার ,
অন্তরে হা হা শুন্যতা,
তারই মাঝে আছে কিছু খেজুর কুঞ্জ ,
সে কি শুধুই মরীচিকা !
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


















1 Jun 2015

ট্র্যাজেডি

ট্রাজেডি
******

শিল্পীর আত্মা ট্রাজেডি তে ভাস্বর ,
যে ট্রাজেডি বিশ্ববন্দিত, বিশ্বজনীন,
ক্ষুদ্র চাওয়া পাওয়ার গ্লানিতে
মলিন নয়।
--

সে ট্রাজেডি একটা তরুণ টগবগে ঘোড়া,
দাঁপিয়ে বেড়ায় জীবনের
অনু পরমানুতে।
---

সে সমাজের হৃদস্পন্দন ,
ধমনীর রক্ত স্রোত,
অস্থির মজ্জা।
 ---

সে ট্রাজেডি চলার পথে খাপ খোলা
ঝকঝকে এক তলোয়ার।
শিল্পীর জীবনে দু দন্ড শান্তি।
অন্ধকারে আলো।

________________________________________________________________________________________________