27 Nov 2015

আমার বাবা

আমার বাবা
********


অনেক দিন আজকে আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। দীর্ঘ্য, সোজা, সুঠাম দেহ, মাথাভরা ঝকঝকে শ্বেতশুভ্র চুল। বাবা আমার পচাত্তর বছর বয়সেও ভারী বিশাল ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে অনায়াসে চারতলায় উঠে আসতেন। হাঁটা চলা ছিল সাবলীল। বিছানা বা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বই বা কাগজ মুখে বসাটা ছিল তাঁর অভ্যাস।খাওয়া দাওয়ার কোন ঝামেলা ছিল না, তবে মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসতেন। আর ঘন ঘন চা পেলেই খুশি। সেই সাথে মুখে সারাক্ষণ জর্দা পান। দিনভর একই খবর শোনা আর খেলা দেখা তে কোন বিরুক্তি ছিল না।
--

বুকভরা স্নেহ, সৎ, সহজ সরল মানুষ, সকরুণ মুখাবয়ব। জীবনে একবারই মাত্র আমাকে একটা চড় মেরেছিলেন,তাও খুব জোরে নয়। মায়ের কাছে বরং আমরা অনেক বেশী মার্ খেয়েছি। কিন্তু বাবা রেগে গেলে এমন একটা হুঙ্কার দিতেন যে, পেটের পিলে চমকে যেত। তাই মার কাছে আমি আর আমার দাদা অনেক বেশী স্বচ্ছন্দ ছিলাম। কিন্তু আমাদের জন্যে নীরবে অনেক আত্মত্যাগ করতেন। আসলে অন্তরে খুবই স্নেহশীল মানুষ ছিলেন।  
--

আর একদিকে আমার বাবা কিন্তু সৃষ্টিশীল মনের মানুষ ছিলেন, নানা রকম হবি ছিল। সারা জীবন বাগান করা, মাটির মূর্তি গড়া , কাঠের জিনিসপত্র বানানো ইত্যাদি। সাংসারিক বিপর্যয়ে সাধারনত বিহ্বল হয়ে পড়তেন। কোন  প্রিয়জন অসুস্থ্য হলেই খুব ঘাবড়ে যেতেন। সবাই তাঁকে দুর্বল চিত্ত মনে করতো। তবে দারুন সাহসিকতায় যুঝেছিলে জীবনের শেষ কটা দিন। আজও স্মৃতি হিসাবে রয়ে গেছে তাঁর  হাতে লাগান কিছু গাছ, তাঁর মাটির তৈরী মূর্তি, আরও নানা কিছু শিল্পকর্ম। সেই সঙ্গে আছে তাঁর স্নেহশীল মনের পরশ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------






  











 

No comments:

Post a Comment