12 Mar 2016

একুশে

একুশে
--------

সেই ছোটবেলা থেকে বড়দের মুখে একুশে ফেব্রুয়ারীর কথা শুনেছি। তখন  তার তাত্পর্য্য বোঝার বয়স ছিলনা। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা একুশে ফেব্রুয়ারী ' গানটা শুনতে খুব ভাল লাগতো। আরও অনেকটা বড় হবার পর  মহান দিনটি সম্পর্কে আস্তে আস্তে একটা ধ্যান ধারণা তেরী হল। কিন্তু এর প্রভাব ও গভীরতা জন জীবনে যে কতটা সুদূর প্রসারী সেটা ফেসবুকে ঢোকার পর হৃদয় দিয়ে অনুভব করলাম। অনুভব করলাম মাতৃভাষার প্রতি কতটা ভালবাসা একটা জাতির মধ্যে থাকতে পারে।
--
বাংলাদেশের মত পশ্চিম বাংলায় মাতৃভাষা ও বাংলা। অথচ এখানে মাতৃভাষার প্রতি সেই গভীর ভালবাসা বা গর্ববোধ কোথায়! বরং এমন কিছু লোক আছে যারা ইংরাজী ভাষাটা না জানলে কিছুটা হীন চোখে দেখে। কিছু লোক আবার বাংলা ভাষা না জানাটা বেশ কৃতিত্বের বিষয় ভাবে।
--
অবশ্য বিপরীত চিন্তার মানুষের সংখ্যা এখনও বেশী বলেই আজও বাংলায় সাহিত্যে অনেক উঁচুমানের কবি সাহিত্যিক জন্ম নিয়ে চলেছেন। এখনও বাংলা সাহিত্যে ভাল ভাল বই পত্রিকা প্রকাশ হয়, সাহিত্য সভা হয়। 
--
কিন্তু সেই প্রচেষ্টা মূলত বুদ্ধিজীবি মহলে আটকে থাকে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যপক হারে বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার প্রচেষ্টার অভাব চোখে পড়ে। ফেসবুকে আমার কাছে দশটা বন্ধুত্বের আহ্বান এলে, তার পাঁচটা বাংলাদেশের আর পাঁচটা পশ্চিম বাংলার হল হয়ত।
--
আমি অবাক হয়ে দেখি যে বাংলা দেশের পাঁচটি বন্ধুর মধ্যে চারজনই  তাঁদের ফেসবুকে যে যেরকম ভাবে পারেন সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করছেন। আর সে দেশের বড় বড় সাহিত্যিক রা নানা গঠনমূলক সমালোচনা করে তাঁদের সমৃদ্ধ করে তুলছেন। নিজেদের লেখা প্রকাশ ছাড়াও সাহিত্যের নানা তাত্বিক আলোচনার মাধ্যমে অপেক্ষা কৃত দুর্বলদের সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট। এর মূলে আছে মহান 'একুশে ফেব্রুয়ারী। '
--
পশ্চিম বাংলায় পাঁচটা বন্ধুত্বের অনুরোধের মধ্যে একজন হয়তো ফেসবুকে সাহিত্য চর্চা করছেন।  আমার মনে হয় মাতৃভাষার অধিকার আমাদের লড়াই করে পেতে হয়নি বলেই কি ব্যপক শিক্ষিত মানুষের মধ্যে তার প্রতি সেই ভালবাসার অভাব !
--
বাংলা দেশের মানুষের রক্তের মূল্যে মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়েছে। তাই হয়্ত তাঁরা এর মূল্য হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পেরেছেন। মাতৃ ভাষার প্রতি তাঁদের টান অন্তরের গভীরে, সেটা তাঁদের অতীব গর্বের ধন। এমন কি বাংলাদেশের যে মানুষেরা বিদেশে থাকেন, তাঁরাও এই একই অনুভূতির অংশীদার।
--
এটা একান্ত ভাবেই আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। ছোটবেলা থেকে বাবা, মা, আত্মীয় স্বজনের প্রভাবে বই পড়়ার রেওয়াজ  আমাদের বাড়ীতে ছিল। কিছুটা লেখালেখির প্রভাব একেবারে ছিল না তা নয়। পরাধীন ভারতবর্ষে দেশবাসীদের লড়াই আর আত্মত্যাগের গল্প ও বড়দের কাছে শুনেছি, দেশকে ভালবাসতে শিখেছি। 
--
কিন্তু সাধারণ শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে এই  ভাষাচর্চার প্রতি আকুলতার ফারাক টা আমি সত্যি কথা বলতে ফেসবুকে এসে অনুভব করেছি। তাই পরিশষে আবারও বলি এ অনুভূতি আমার একান্ত ভাবেই ব্যক্তিগত। 
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



























No comments:

Post a Comment