17 Feb 2018

অনুশোচনা

অনুশোচনা
*********

জানি, অনুশোচনার কথা শুনলে মুখ গম্ভীর করে বকে দিবি,তাই মনে মনে শুধু পুরান স্মৃতি ঝালিয়ে চলেছি অবিরত মনে পড়ে হটাৎ কেমন একদিন আমাদের বাড়ী এসে নির্দ্বিধায়  হুকুম করেছিলি খেয়ে নিয়ে আমরা দুজন আমার বাড়ী  যাব।
--
লক্ষী মেয়ের মত কোন রা কারিনি, তোর সাথে শান্তিপুর লোকালে সটান তোর বাড়ী গিয়ে উঠলাম। রাত ভর কত জমে থাকা কথা। ভোর হতেই নদী দেখাতে নিয়ে গেছিলি, সে বছরে ভীষণ বন্যাবিদ্ধস্ত ক্ষতগুলি দেখিয়েছিলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। মেঠো পথ হেঁটে গ্রামগঞ্জ ঘুরে ফিরলাম।
--
মনে পড়ে অতি সযোতনে রাখাএকটা চায়ের কাপ বার করে চা ঢেলে আমায় দিলি, তখন তোর মমতা মাখা চোখ দুটোতে কেমন যেন একটা দ্যুতি দেখেছিলাম,ওটা যে তোর শহীদ স্বামীর কাপ ছিল।তোর হাতের সেই বেগুন দিয়ে মেথিশাক আর চুনোমাছের ঝালের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছেরে। তোদের গ্রূপের গান শুনলাম, আত্মীয় বন্ধুদের বাড়ী গেলাম দিন চার পাঁচ কাটিয়ে কলকাতার ট্রেনে তুলে দিলি।
--
এভাবে কখনও তুই এসে থাকতিস আমাদের বাড়ী কখনও বা আমাকে নিয়ে যেতিস শান্তিপুর, একই ভাবে দিন কাটতো, মনের এত কথা জমে থাকত, শেষই হতো না। আর কোনদিন তোর ওই বিশেষ কাপটায় চা দিতে কখন ভুল হতোনা, ওটা নাকি তোর বিশেষ মানুষদের জন্য তোলা থাকত।  প্রতিবার ই ফেরার সময় দুজনের মনখারাপ লুকাতে নানা মজার গল্প বলতিস, দুজনে খুব হাসতাম।
--
ক্রমে আমরা প্রত্যেকেই নিজেরা নিজেদের পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কালে ভদ্রে দেখা হত। চিঠিরপত্রের আদানপ্রদানও ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এলো। আমি আমার ছেলে আর সংসারে ব্যস্ত, তুই  ব্যস্ত তোর নতুন সংসারে। তারই মাঝে যে যার মত করে নানা রকম সামাজিক কাজের ভার।   
--
বহু দিন বাদে মোবাইল ফোনের দৌলতে নতুন করে যোগাযোগ। ঠিক আগের মতই আন্তরিকতা আর গল্প।  সময়ের হিসাব থাকতো না, কথা যেন শেষই হতো না। আর প্রতিবার তোর মন তোলপার করা ডাক," একবার আয় না আমার কাছে, তোকে যে আমার অনেক কিছু বলার আছে। " যাবো যাবো করেও যেয়ে উঠতে পারিনি।
--
হটাৎ করেই সবাইকে ছেড়ে চলে গেলি। আজও অহরহ কানে বাজে তোর সেই আকুল আহ্বান। খুব অসহায় লাগে, নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। কত অভিমান নিয়ে যে চলে গেলি ! জানিস তোর সেই নির্মল হাসি যেন এখনও শুনতে পাই, শুনতে পাই তোর গান। তোর লেখা নাটক গান, গল্প মনে পড়ে। মাঝে মাঝে নাটকের মহড়ায় তোর নির্দ্দেশ, শাসন সবকিছুই মনে পড়ে। খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করেরে তোকে!
--
এখন চারদিকের ঘটনাগুলিকে আর সহ্য করা যাচ্ছে নারে। এর থেকে যেন অনেক ভাল ছিল আমাদের সেই পুরনো যাপন, যখন আমরা সবাই ছিলাম সবাইয়ের জন্য। ভীষণ, ভীষণ ভাবে ফিরে পেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলিকে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
   







No comments:

Post a Comment