2 May 2020

প্রবাসী শ্রমিক - ২

প্রবাসী শ্রমিক - ২
****************
  
জয়িতা আর শিখা শিয়ালদহের মোড়ে দেখা করে হ্যারিসন রোড ধরে চলতে শুরু করল, ৭১সালের এক দুপুরে। কথা বলতে বলতে বেশ কিছুটা হাঁটার পর রাস্তায় একটা বেশ সাজান গোছান মিষ্টি / সিঙাড়া / কচুরীর  দোকানে ঢুকল।ভেতর দিকে বসে কিছু খাবার জন্যে সেই ফাঁকে কাগজপত্র আদানপ্রদান আর  কথাবার্তা বলে নেবে বলে। দুটো করে কচুরী/ডাল আর চায়ের অর্ডার দিল।
---
যিনি খাবার দিয়ে গেলেন তিনি ওদের টেবিলের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন দেখে ওরা তাঁর সাথে কথা বলতে শুরু করল, কি নাম, দেশ কোথায়, বাড়ীতে কে কে আছে, গ্রামে জমিজমা আছে কিনা, ডিউটি আওয়ার্স কতক্ষন, ক্যাজুয়াল না রেগুলার স্টাফ, কতদিনে বাড়ি যান, মজুরী কত ইত্যাদি। নাম তাঁর গণেশ, চব্বিশ পরগণার মানুষ। কথা হচ্ছিল গণেশদার কাজের ফাঁকে ফাঁকে, অন্যান্য টেবিলে খাবার দেবার সাথে সাথে। আরও বেশীক্ষন বসার জন্য আবার দুটো করে কচুরী, আর চা নিল ওরা। ক্রমে ক্রমে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলতে শুরু করে দিল। ভর দুপুর, দোকানে বেশী খরিদ্দার ছিল না। তাছাড়া ওই দোকানে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের ভীড় বেশী,তারা বসতো অনেকক্ষণ, তাই ওরাও সেদিন প্রায় তিন ঘন্টা কথা বলল। গণেশদার ডিউটি শেষ হতে, ওরাও উঠে পড়ল। আবার দেখা হবে বলে চলে এল।
---
দুদিন বাদে আবার ওরা প্রায় একই সময়ে দোকানটায় গেল গণেশদার সাথে কথা বলার জন্য। সেদিন নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে কিছু বই আর পার্টির কাগজপত্র দিয়ে এল। ঘন্টা তিনেক আগের দিনের মত কথাও  বলতে থাকলো। সেদিন একটা নতুন ঘটনা ঘটল। চারটে করে দুজনে কচুরী খেয়ে দাম দিতে যাওয়ার সময় গণেশ দা মালিককে দুটো করে কচুরীর দাম বললো। এভাবে আরও দুদিন যাবার পর ঠিক হল জয়িতা এখনকার যোগাযোগ রাখবে, দরকার হলে শিখা সাহায্য করবে।
---
মাস দুয়েক যাবার পর গাণেশ দার মাধ্যমে মানিক দা, নির্মল দা, বনমালী, অজিত এই রকম ৫/৬জনের সাথে আলাপ হয়ে গেল। গনেশ দা তাঁদের মধ্যে রীতিমত রাজনৈতিক প্রচার চালিয়ে ৫/৬ জনের একটা ইউনিট তৈরী করে ফেললেন। নিয়মিত দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা হল। আস্তে আস্তে দোকানের মধ্যে আলোচনার সময় কমিয়ে বাইরে এক এক দিন একজন বা দুজনের সাথে দেখা করে কথা বার্ত্তা হতে লাগল, লোকাল মাস্তান,পুলিশের খোচরদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য। রাতে দোকানের মালিক চলে গেলে একজন ছেলে কমরেডের সেল্টার নেবার ব্যবস্থা হল। ওখানকার শ্রমিকদের মাধ্যমে চব্বিশ পরগনা, মেদিনীপুর, হাওড়া তিনটি জেলায় গ্রামে কমরেডদের যাবার রাস্তা তৈরী হল। তাঁরা হপ্তা শেষ হলে হপ্তার টাকা নিয়ে যখন বাড়ী যেতেন তাঁদের সাথে ছেলেরা চলে যেত, এবং তাঁদের মাধ্যমে গ্রামগুলিতে পার্টি ইউনিট গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাত।
---
শহরের দোকানের  যোগাযোগ টা মূলতঃ জয়িতা রাখত। গণেশদাদের কথা মত সে সকাল আটটা নাগাদ দোকান খোলার সময় যেত, কারণ তখন মালিক অনুপস্থিত থাকত। তাছাড়া পাড়ার মাস্তান বা খোচরদের আনাগোনা  প্রায় থাকতো না।  রীতিমত ভরপেট কচুরী, নানা মিষ্টি দিয়ে তাঁরা শুধু সকালের কেন প্রায় দুপুরের খাবার খাইয়ে দিতেন, কোন বারণ শুনতেন না। শুধু দুটো কচুরী আর এক কাপ চায়ের দাম দিয়ে চলে আসতে হত। শহরের শ্রমিক অঞ্চলে তাঁরা মাঝে মধ্যে ৫/৬ জনের সাথে বসার ব্যবস্থা করতেন। বছর দুয়েকের মধ্যে একই সাথে ওখানকার শ্রমিকরা গ্রাম আর শহরে পার্টির কাজ চালাতে শুরু করেছিলেন। তাঁরা বেশীর ভাগ ই ছিলেন প্রবাসী  শ্রমিক বসত ভিটে ছাড়া কিছুই প্রায় ছিল না, পেটের তাদিদে গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। সর্বহারা শ্রেণী শেকল ভাঙার লড়াইয়ে এভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------













,




     










No comments:

Post a Comment