4 Jul 2019

শোনিচারীর কথা

শোনিচারীর  কথা
*************

শোনিচারী কে আমরা চিনেছিলাম মাসিমার (শান্তিরানী দেব ) মাধ্যমে। ৭০ দশকে বর্দ্ধমান জেলে মাসিমা আর  বুলু সাধারণ বন্দিনীদের সাথে থাকত। শোনিচারী এক আদিবাসী সাঁওতাল মেয়ে, খুনের অপরাধে জেলে এসেছিল, চিরাচরিত সেই শোষক আর শোষিতের দ্বন্দ্বের  ইতিহাসে।
--
দরিদ্র অভাবী একটি পরিবার - বাবা, মা, শোনিচারী আর তার বড় আদরের বছর খানেকের ছোট ভাই। একটা ঝক ঝকে মাটির নিকোনো ঘর আর তার লাগোয়া সামান্য কয়েক কাঠা চাষের জমি। ঘরের উঠোনে আর মাটির ঘরের চালে ছিল নিজেদের হাতে ফলান তরিতরকারির বাগান। চারজনের অক্লান্ত পরিশ্রমে চাষের জমিতে ফলত ধান। এই নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল তাঁরা। পরিবারের মধ্যে ছিল অগাধ ভালবাসা। সহজ সরল মানুষ তাঁরা, গ্রামের জমিদারের কুটিল ষড়যন্ত্রের কথা তাঁদের জানা ছিল না।
---
শোনিচারী তখন যৌবনে পা রেখেছে, কচি সবুজ তার মন। সবল শরীরে খাটতেও পারত, পাড়াপড়শীর সাথে প্রাণ খুলে মিশতে বাঁধা কোন ছিল না, সঙ্গী সাথীদের সাথে পালা পার্বনে মন উজাড় করে আনন্দ করতে জানত, আর সদাই ঝর্ণার মত খিলখিলিয়ে হাসত। এইভাবে বেশ দিন কাটছিল, কিন্তু  ঈশান কোনে কাল মেঘের আভাস তাঁরা পায়নি। গ্রামের জোতদার মুখিয়ে ছিল যে কোন শর্তে ফন্দিফিকিরে তাঁদের জমিখানি দখল করার।
--
একদিন পার্বণে সঙ্গিনীদের সাথে মেলায় গেছিল শোনিচারী। ভাইও তাঁর কাজে কর্মে গ্রামের বাইরে ছিল। মেলায় অনেক আনন্দ করে ভোর রাতে গ্রামে ফিরে শোনিচারী দেখে তাঁদের সোনার কুটির জ্বলে পুড়ে খাঁক, তারই সাথে বাবা ও মা পুড়ে কালো কাঠ, সবজি বাগান ও তথৈবচ। পরবে, মেলায়  মেতে ছিল গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ। অবশিষ্ট গ্রাম রাতের ঘুমে ডুবে। হটাৎ পোড়া ধোঁওয়ার  গন্ধে জেগে ওঠে. চারিদিকে জোতদারের লেঠেলদের দেখে ভয়ে পাথর হয়ে যায়। শোনিচারী বাড়ী ফিরে সব দেখে শুনে দিশেহারা। ভাই তখনও ফেরেনি। ধীরে ধীরে ভিতরে আগুন ধিকি ধিকি করে জ্বলতে থাকে। মাথা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, কোন মতে একটা টাঙ্গি জোগাড় করে সব বাধা ভেঙে ছিটকে বেরিয়ে পড়ে। শয়তান জোতদারের  বাড়ীর দিকে দৌড়াতে থাকে।
--
তখন সবে ভোর, জোতদারের বাড়ীর লোকজন ভিতরে ব্যস্ত, শুধু উঠোনে তাদের  দুটি বাচ্চা ঘুম চোখে বসে। দিকবিদিক শূন্য শোনিচারীর মাথা তখন ইটের ভাঁটার মত জ্বলছে। প্রতিশোধের আগুনে সে আধা ঘুমন্ত শিশুদুটিকে টাঙ্গি দিয়ে ক্রমাগত কোপাতে থাকে, তাদের কান্নার আওয়াজে চারিদিকে লোক জমে গেলেও শোনিচারী বধির। তার রণমূর্তি দেখে কেউ এগোতে সাহস পায়না, অবশেষে শ্রান্ত হয়ে রক্তাক্ত উন্মাদিনীর মত টাঙ্গি হাতে থানায় গিয়ে হাজির হয় অকপটে সব বৃত্তান্ত খুলে বলে।
--
জোতদার তার পেটোয়া লোকজন নিয়ে থানায় গিয়ে নালিশ জানায় শোনিচারী ও তার ভাই দুজনে মিলে বিনা কারণে তার নাতি ও নাতনি কে খুন করেছে। শোনিচারী বারবার প্রতিবাদ জানায় তাঁর ভাই গ্রামেই নেই, সে একাই শিশুদুটিকে হত্যা করেছে, জমিদার বাবু  বিনা কারণে তাঁর ঘুমন্ত বাপ্ মা কে রাতে পুড়িয়ে মেরেছে। কিন্তু থানার দারগাও আর এক খয়ের খাঁ। সে জমিদারের নালিশের ভিত্তিতে কেস সাজায়। গ্রামে ফিরে সব শুনে ভাই শোনিচারীর সাথে দেখা করতে এলে তাকেও হাজতে পুরে দেয়।  
--
বিচারে শোনিচারী আর তার ভাইয়ের যাবজ্জীবন সাজা হল দুটি শিশুকে মারার অপরাধে। গ্রামের সব সরল গরীব মানুষরা পুরো ঘটনার কথা আদালতে বলতে চেষ্টা করে। শোনিচারীর ভাই ঘটনার দিন গ্রামেই ছিল না, সে একদম নির্দোষ। আর জমিদার বাবুর আদেশে তার  দালালরা  সাজিস করে  নিরীহ ঘুমন্ত বাপমা কে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার জন্য শোনিচারীর মাথার ঠিক ছিলনা বলেই সে ওই অপরাধ করেছে, এ সব কথাই আদালতে তাঁরা বলেন। কিন্তু ঘাগু জোত্দারের দালালদের আধা মিথ্যা সাক্ষ্য ও থানার দারোগাদের পক্ষপাতিত্বমূলক কেস সাজানো, আর বাদীপক্ষের তুখড় ওকালতির চালে রায়  শোনিচারীদের বিরুদ্ধে যায়। তাঁদের বাবামায়ের পুড়িয়ে মারার ঘটনা কে নিছক দুর্ঘটনা  বলে গণ্য করা হয়। এরপর চতুর  জোতদারের শোনিচরীদের জায়গা আত্মসাৎ আর কোন বাধা থাকল না।
--
পাথরের মূর্তির মত সে  বড় বড় চোখ মেলে অসহায় ভাবে  চুপ করে শুনে যায়। রায়ের শেষে চীৎকার করে কেঁদে ওঠে," হুজুর, মুই খুনটো কৈরলাম, মকে ফাঁসী দাও কেনে , মর ভাই টো কুন্ দুষ করেক লাই, ওয়ারে সাজা দিলেক কেনে ? তমাদের পায়ে গড় করি, উকে ছেইড়ে দাও গ। " কিন্তু ইটঁকাঠের আদালত কি তার অসহায় কান্না শোনে! এইভাবেই  দিনের পর দিন  অন্যায়ের বদলা নিতে গেলে এভাবেই গরীবের শাস্তি ঠিক হয়, বড়লোকে টাকার জোরে ঠান্ডা মাথায় খুন করেও  ঠিক মুক্তি পায়, গরীবের ভিটে মাটি আত্মসাৎ করে।
--
শোনিচারী জেলে ফিরে আসে কাঁদতে কাঁদতে,পাগলের মত দেয়ালে মাথা ঠুকতে থাকে। সবাই কে একই প্রার্থনা জানায়, বাচ্চা দুটিকে সে মেরেছে, মহা অন্যায় করেছে, তার  ফাঁসী হোক, কিন্তু তার ভাইতো কোন কিছুই জানতনা, কিছু অন্যায় সে করেনি, তাঁর কেন শুধু শুধু সাজা দিল।প্রচন্ড জ্বরে গা তার পুড়ে যেতে থাকে। সকলে শান্ত করার চেষ্টা করে, আমাদের মাসীমা কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে সারা রাত তার মাথায় জল পট্টি দিতে থাকেন, সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। সে রাতের মত শোনিচারী ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু কদিন বাদে বাদেই এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। একদিকে দুটি নিষ্পাপ শিশুকে খুনের দংশন, অন্যদিকে নির্দোষ ঘুমন্ত বাপমা কে পুড়িয়ে মারা, সবচেয়ে বেশী পরম আদরের ভাইটির বিনা দোষে সাজা তাঁর মনের মধ্যে কুরে কুরে খেত। আমাদের মাসীমা তাকে সেবা করে সরিয়ে তুলতেন, আমাদের রাজনীতির মূল বিষয়গুলি তাঁর মত সহজ সরল ভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করতেন। সে সময় মাসিমাই ছিলেন শোনিচারীর সবচেয়ে বড় ভরসা, একান্ত আপনার জন। ধীরে,ধীরে তার অবস্থার একটু উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু এই টুকু সাহচর্য আর ভরসা তার ভাগ্যে সইলো না, মাসীমাকে কলকাতার প্রেসিডেন্সী জেলে বদলী করা হল।
--
 বর্দ্ধমান থেকে মাসিমা আর বুলু আমাদের মধ্যে এসে পড়লেন। এদিকে মীনাক্ষিকে ডিভিশন ওয়ার্ড এ দিয়েছে, সেলে কল্যানী, রাজশ্রী আর কল্পনা। রাজশ্রী তখন একটা বিশাল মানষিক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেন্ট্রাল জেল ভাঙার যে পরিকল্পনায় ওরা যুক্ত ছিল, তাতে ওর পরমপ্রিয় কমরেড ও স্বামী সঞ্জয়ের গুলিতে মৃত্যু হয়। ওয়ার্ড অনেক নতুন মেয়েরা এসেছে। আমরা সবাই মহা ব্যস্ত। এর মধ্যে একদিন মাসিমাকে হাসপাতালের বড় জালনায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে আমরা কয়েকজন একটু তফাৎ রেখে কাছাকাছি এসে দাঁড়ালাম। জালনার ওপারে ছিল শোনিচারী, এইখানে চিকিৎসার জন্য বদলী হয়ে এসেছে। সমস্ত অপরিচিতের মাঝে মাসীমাকে দেখে যেন হারান মানিক খুঁজে পেয়েছে। তাঁর দুহাত জড়িয়ে ধরে একবার কাঁদে, আবার কান্নার মধ্যেই আনন্দে মুখে হাসির ঝিলিক দিতে থাকে। এতদিন আমরা যে শোনিচারীর গল্প অনেকবার শুনেছি তাকে এবার আমরা চাক্ষুস দেখলাম।
--
এই ভাবে চলতে থাকে। হাসপাতালের মেট তখন মহাদেবিয়া। মেট্রনদের সামনে সে তাঁদের আজ্ঞাবহ থাকত, কিন্তু আড়ালে আমাদের সাথে যথেষ্ট ভাল ব্যবহার করত। তাই মাসিমা প্রতিদিন শোনিচারীর সাথে কথা বলার সুযোগ পেতেন। সে সানন্দে মাসিমাকে তার সব দুঃখ,অভিযোগ আর জেলের মহিলা  ওয়ার্ডের বিভিন্ন ঘটনার গল্প করত। স্বাভাবিক ভাবেই  যে বিপর্যয় তাঁর জীবনে ঘটে গেছে তা কি সে ভুলতে পারে, প্রায়ই ভীষণ কান্নাকাটি করত, মাসিমা গরাদের এপার থেকে তাকে মাথায় হাত বুলাতেন, সান্তনা দিতেন।একমাত্র বুলু ছাড়া আমরা কেউ গিয়ে দাঁড়ালে শোনিচারী কচ্ছপের মত খোলসের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে ফেলত, কারণ আমরা বাকিরা সবাই তার কাছে অপরিচিত।  তাই আমরাও দূরে দূরেই থাকতাম, মাসিমার কাছ থেকেই সব কথা শুনতাম। মহাদেবিয়াও শোনিচারীর ভার মাসিমার হাতে দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হওয়াতে তাঁদের আলাপচারিতাতে বাধা দিত না।
--
তখন জেলের জালঘরে বার্মা থেকে পালিয়ে আসা অনেক জন মহিলা ও তাঁদের বাচ্চাদের রাখা হয়েছিল। প্রচন্ড কষ্টে তাঁরা ছিলেন। শীতের রাতে ঠান্ডা কনকনে বাতাস আর গরমের দুপুরের তীব্র দহন খোলা জালের ভিতর দিয়ে আসত , ছোট বাচ্চাগুলি জ্বর, পেটগরম ইত্যাদিতে ভুগতে। উপরন্তু জেলে বন্দিনীদের স্বভাবিকভাবেই চিকিৎসা, ওষুধ, পথ্য কোন কিছু ঠিক মত মিলত না। ডাক্তার বাবুরা ডায়েট লিখলেও সে সবই মেট্রন, অসৎ জমাদারনী আর তাদের পেটোয়া দালাল রা আত্মসাৎ করত। রোজই প্রায় জলঘরে  শিশুমৃত্যু ঘটত। একদিন বর্মী মাসিরা অনশন করে তার প্রতিবাদে। আমরাও সমর্থনে অনশনে ভাগ নিই। হাসপাতালের জানলা দিয়ে ডাক্তার বাবুদের ওষুধ,ডায়েট ইত্যাদি ব্যাপারে বাস্তব অবস্থা টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতে থাকি। আমাদের সামনে মেট্রন মেটদের ওপর খুব হম্বি তম্বি করে যাতে ঠিক মত ডায়েট ওষুধ দেওয়া হয়। অনশন প্রত্যাহার হয়। ডাক্তারদের সামনে এই অপমান শোধ যে পরে কোন ছুতায় মেট্রন নেবে তা আমরা বুঝে গেলাম। কিন্তু আপাতত আর কিছু করার ছিল না।
--
আমাদের আশংকা একদিন সত্য হল। এক সকালে ভাটির দিন হটাৎ প্রচন্ড কান্নাকাটির রোল সারা মহিলা ওয়ার্ডে প্রতিদ্ধনিত হতে লাগল। আমরা  সকলে ডিভিশন বাড়ীর খাঁচায় বন্দী, একবার মেয়াদী নম্বরের জালনায়, একবার   হাসপাতালের জালনায়  কি তুলকালাম ঘটছে তাই জানার ব্যাকুল হয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকি। শেষে মেয়াদী নম্বর থেকে আমাদের ভালবাসত এমন কয়েক জন জানাল বর্মি মাসিদের বেধড়ক মারছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে কুখ্যাত বিজয়া জমাদারণী। "কেন মারছে " ? "ওদের কাছে নাকি দা চাকু বঠি সব লুকান ছিল, অনেক গয়না গাটি লুকানো  ছিল !" কি করে এসব থাকবে , জেলে ঢোকার সময় জেল অফিসে একবার, মহিলা ওয়ার্ডে একবার তন্নতন্ন করে সব বন্দিনীদের সারা শরীর ও জিনিসপত্র তল্লাশি হয়, পয়সাকড়ি, গয়নাগাটি  জেলের অফিসে জমা রাখা হয় , একটা সুঁচ গলার জো থাকেনা। সেখানে এতো গয়নাগাঁটি, চাকু, হাত দাও, বটি  নিয়ে তাঁরা দিব্যি চলে এল ! আর এত দিন বাদে সেগুলি ধরা পড়ল !"
--
"আমাদের রাজনীতির প্রভাবে যে বন্দিনীরা ছিলেন, তাঁরা বললেন সব ছল গো দিদি। ডায়েট নিয়ে মেট্রনের মুখ পুড়েছে না, এটা তার প্রতিশোধ। আমাদের মতই কুঁড়িয়ে পাওয়া টুকরো টাকরা টিনের পাত ছিল শুধু তাই পেয়েছে আর কারো কারো পায়ের আঙুলের আংটি আর অল্প কিছু বাসনকসন ছিল কুখ্যাত দালাল শিখা অন্য জেলে যাবার সময় কেড়ে নিয়েছিল, বাকী  লোভী শয়তানগুলি সেগুলির ভাগ তখন ই নিয়ে নিয়েছে। বাকী আর কিছুই পাবার নেই। সব  মিথ্যা রটনা।" ইতিমধ্যে হাপাতালের জালনায় দেখি শোনিচারী উত্তেজিত ভাবে সেই সব রটনাগুলি বিশ্বাস করে মাসিমাকে শোনাচ্ছে। মাসীমা বোঝাবার চেষ্টা করছেন। এতদিন হাসপাতালে থাকার ফলে তাঁর সরল মনে মেট্রনের আপাত মিঠে কথা আর সুবিধাভোগী দালালদের সঙ্গ তাদের প্রতি তার মনে একটা আস্থার  ছাপ ফেলেছে। তাই  সরল বিশ্বাসে তাদের সপক্ষে বলে যাচ্ছে। হটাৎ আমাদের মধ্যে থেকে একজন বলে বসে, "তুমিও শেষে ওই দালাদের দলে ভিড়লে।"  অপমানে, অভিমানে মুখ তাঁর কাল হয়ে ওঠে। মাসিমা বারবার ডাকলেও কোন উত্তর না দিয়ে সে পিছন ফিরে হাঁটা দেয়।
--
ইতিমধ্যে আমরা হাসপাতালের গরাদের এপার থেকে মেট্রন আর দালালদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে থাকি। ডাক্তারবাবুরা এসে যান, তাঁদের আমরা আসল ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে থাকি। তাঁরা সব বুঝলেও, একমাত্র স্বল্প আয়োজনে যে টুকু সম্ভব আহতদের চিকিৎসা করেন। সময় হয়ে যাওয়ায় কজন জমাদার আর জমাদারনী এসে সব বন্দীদের খাঁচায় ভরে দেয়।
--
এর ফলে একটা খুব খারাপ ঘটনা ঘটল। শোনিচারী আর আমাদের থেকে দূরে সরে গেল। একমাত্র মাসিমাই ছিল তাঁর আপনার, কিন্তু তাঁর ডাকেও সে আর সাড়া দিলনা। মেট্রন তাকে প্রথমে হাজতি নম্বরে পাঠিয়ে দিল। অন্যদের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছিলাম তার নিঃসঙ্গতা দূর করতে। কিন্তু সে যেন চিরদিনের জন্য বোবা হয়ে গেল। তার অপরাধ বোধ তাকে ধীরে ধীরে অপ্রকিতস্থতার দিকে ঠেলে দিতে লাগল। হয়ত যখন তার বাবামায়ের পুড়ে কাঠ চেহারার কথা মনে পড়ত, দুটি শিশুর তীব্র আর্তনাদ কানে আসতো, তার ছোট ভাইটির বিনা দোষে সাজার কথা মনে পড়ত সে আর ঠিক থাকতে পারতনা গোঙাতে থাকত, উন্মত্ত হয়ে পড়ত। অবশেষে একদিন পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে পাগল বাড়ীর বাসিন্দা হল। এই খবর টুকু মহাদেবীয়া সবার অলক্ষে মাসীমাকে দিয়ে যায়। আমাদের একটা ভুলে সহজ সরল একটা নবীন প্রাণ অন্ধকার জীবনে ডুবে গেল।  কদিন এই নরক যন্ত্রনা তাকে ভোগ করতে হবে, জীবনের আলোতে আর কোনদিন  সে ফিরতে পারবে কিনা, সেটা অনিশ্চিতই রয়ে যাবে। তার পরিণীতি আর কেউ জানতে পারবেনা, আর মাসীমার মনে তার গভীর ক্ষত  হয়ে থাকল। আজও কত শোনিচারী এই ভাবে শোষণ আর অত্যাচারের শিকার হয়ে অন্ধকার কোন কুঠুরীতে পচে মরছে তার হিসাব নেই।      
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------












 














 
















 






































No comments:

Post a Comment